| মুসা ইয়াহিয়া |
পরম+অণু = পরমাণু। পরম অর্থ নিখুঁত, পূর্ণাংগ, সর্বোচ্চ। বিজ্ঞানী দাদাদের ভাষায় যাকে আর ভাঙ্গা যায় না, বা ভাঙলে তার স্বাধীন অস্তিত্ব থাকে না তাই পরমাণু। তবে আজকাল পরমাণু কিন্তু মোটেই ‘পরম’ অণু নয়। একে ভেঙ্গে ইলেক্ট্রন, প্রোটন, নিউট্রন, মেসন, লেপটন, ব্যারিয়ন, মিউন ইত্যাদি ভুরি ভুরি অতিপারমাণবিক কণা (Subatomic Particles) পাওয়া যাচ্ছে। এদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানাসহ পরমাণুর ব্যাবচ্ছেদ করতে চলো ডুব দেই পরমাণুর গহীন নিসর্গে। না ডুবে মরার ভয় নেই। মণিমুক্তা না পেলেও হাত একেবারে খালি ফেরত আসবে না। কারণ পরিসংখ্যান আমাদের পক্ষেই আছে।
১৯২২ সালে এই কাণ্ড করেই যে নিলস বোর পকেটে পুরেছিলেন সে বছরের পদার্থবিদ্যার নোবেল প্রাইজ। ডুব মারার ফায়দা তিনি একাই পাননি। পরমাণুর ছোট্ট জগতে গবেষণার ঘোড়া দৌড়িয়ে আরো অনেক বিজ্ঞানীই ধন্য হয়েছেন স্বপ্নের নোবেল পুরস্কার পেয়ে। ১৯২২ সালে নিলস বোরকে দিয়ে শুরু। এরপরে পরমাণুতে ইলেক্ট্রনের ঘোরাঘুরির নিয়ম আবিষ্কার করে জেমস ফ্র্যাংক ও গুস্তাভ হার্টজ তিন বছর পরে ১৯২৫ সালে জিতে নেন নোবেল। ১৯৩৩ সালে স্রডিঞ্জার ও পল ডিরাক আবারো নোবেল জিততে কাজে লাগান পরমাণুকে। অবদান পরমাণু তত্ত্ব।
১১ বছর পর আবার নোবেলের জগতে পরমাণুর হানা। এবার পোলিশ-আমেরিকান বিজ্ঞানী আইজ্যাক রাবি পরমাণুর নিউক্লিয়াসের চৌম্বক ধর্ম নির্ণয়ে অনুরণন কৌশল (Resonance method) বের করে ছিনিয়ে নেন নোবেল প্রাইজ। এরপর নিয়মিতভাবেই নোবেলের সাথে জড়িয়ে থাকলো পরমাণু। ১৯৫১, ১৯৬১, ১৯৬৩, ১৯৬৬ সালসহ অন্তত ১৭ বার পদার্থবিদ্যার নোবেলের সাথে জড়িয়ে ছিল পরমাণুর নাম।
সর্বশেষ রেকর্ডও ভালো। এইতো ২০১৩ সালেই বিজ্ঞানী পিটার হিগস ও ফ্রাঁসোয়া এংলার্ট নোবেল পেলেন। তাঁদের অবদান অতিপারমাণবিক কণিকারা কোথা থেকে ভর পায় তার ব্যাখ্যা। তাঁদের থিওরি আবার প্রমাণিত হয়েছিল সার্নের মত প্রতিষ্ঠানের লার্জ হ্যাড্রোন কোলাইডারের কণা ত্বরকযন্ত্রের (Particle Accelerator) মাধ্যমে। যাই হোক, বোঝা গেলে পরমানুর জগতে বেড়াতে গেলে পরমাণু ভালোই আতিথেয়তা করে। আমরাও তাহলে দাওয়াত নিয়ে নিই, কী বলো?
প্রথমে হোস্ট বানাই নিলস বোরকে। আগেই বলেছি, বিস্ময়কর প্রতিভার অধিকারী এই বিজ্ঞানী নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন ১৯২২ সালে। অবদান ছিল পরমাণুর গঠন ও তা থেকে নির্গত বিকিরণ (Radiation) নিয়ে গবেষণা।
ইলেকট্রন তথা পরমাণুর কোন গাঠনিক উপাদান আবিষ্কারের বহু আগে থেকেই কিন্তু মানুষ ইলেকট্রিসিটি সম্পর্কে জানতো। খৃষ্টপূর্ব প্রায় ৬০০ সালের দিকে থেলিস লক্ষ্য করেন অ্যাম্বার তথা সোলেমানী পাথরকে (পাইন গাছের শক্ত আঠা) ফার (Fur) দিয়ে ঘষলে তা পশম, রেশমি কাপড় ও অন্যান্য হালকা বস্তুকে আকর্ষণ করে। থেলিস অবশ্য এই ঘটনাকে কোন পারমানবিক কণিকার প্রভাব বলে মনে করেননি।
খৃষ্টপূর্ব ৪৬০অব্দ। ডেমোক্রিটাস দিলেন পরমাণুর ধারণা। তিনি ভাবলেন, আমি যদি এক খণ্ড বস্তুকে ভেঙ্গে ফেলি, দুই ভাগ করি, চারভাগ করি, ভাগ করতেই থাকি, তাহলে ঠিক কত বার ভাঙ্গার পর একে আর ভাঙ্গা যাবে না। কী সুন্দর ভাবনা তাই না? তিনি সিদ্ধান্তে এলেন, এক পর্যায়ে গিয়ে একে থামতেই হবে। যেখানে গিয়ে থামলাম, তার নাম দিলাম অ্যাটম (Atom) বা ‘পরমাণু’।
কিন্তু এই মতকে পাত্তা দেওয়া হলো না। কারণ, ততো দিনে শুরু হয়ে গেছে এরিস্টটলের অন্ধ অনুসরণ। তিনি যাই বলবেন তা-ই সঠিক আর বাকি সব কিছু ভুল! মাটি, বায়ু, পানি আর আগুণ দিয়ে নাকি সব কিছু গঠিত! সেই তুলনায় ডেমোক্রিটাস কতো আধুনিক ছিল, চিন্তা করো। এরপর পার হয়ে গেল দীর্ঘ ২ হাজার বছর। পরমাণুর জগতে কোন বিজ্ঞানীই দাওয়াত নিলেন না। কাজটা আবার শুরু হলো ১৮০০ সালের শুরুর দিকে। বিজ্ঞানী ডাল্টন পরীক্ষা চালিয়ে দেখলেন যে, পদার্থের আসলেই ‘মৌলিক’ কোন গাঠনিক উপাদান আছে। তিনি পরমাণুর পূর্ণাংগ কোন কাঠামো দাঁড় করাতে না পারলেও এবার গবেষণা সেদিকেই যাত্রা করল।
১৮৯৭ সাল। ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটির ক্যাভেন্ডিস ল্যাবে বিজ্ঞানী জে জে থমসন একটি খালি কাচ নলের ভেতর দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহ নিয়ে পরীক্ষা চালাচ্ছিলেন। তাঁর লক্ষ্য ছিল ক্যাথোড রশ্মি নিয়ে বহু পুরানো ধাঁধার সমাধান বের করা। পরীক্ষা চালানোর পর তিনি একটি সাহসী প্রস্তাব দিলেন- এই যে রহস্যময় রশ্মিগুলো, এরা আসলে পরমাণুর চেয়ে অনেক ছোট কোন কণিকার স্রোত বা প্রবাহ। তারা আসলে পরমাণুরই খুবই ছোট একটি খণ্ড। এগুলোকে তিনি প্রাথমিকভাবে নাম দিয়েছিলেন করপাসল (corpuscles) বা কণিকা। থমসন জানতেন, ইলেকট্রনের চার্জ হচ্ছে ঋণাত্মক। তিনি পরমাণুকে ধনাত্মক চার্জ ধরে নিয়ে এর ভেতরে ইলেকট্রনের অবস্থানকে পুডিং এর মধ্যে ছড়িয়ে থাকা কিশমিশের সাথে তুলনা করলেন। বাংলায় একে অনেক সময় তরমুজ মডেল বলা হয় যেখানে তরমুজের বিচিগুলোকে ধরা হয় ইলেকট্রন।
ডাল্টনের প্রভাবে তখন আবার মনে করা হতো পরমাণুই আসলে ‘পরম অনু’। ফলে, পরমাণুতে আবার আলাদা আলদা অংশ আছে, এটা মেনে নেওয়া কষ্টকর হয়ে পড়েছিল। থমসনের ধারণার পক্ষে তাঁর পরীক্ষা থেকে প্রাপ্ত ফলাফল সুস্পষ্ট প্রমাণ দিতে পারেনি। প্রমাণ পেতে নির্ভর করতে হয়েছিল থমসনের আরো এবং অন্যান্য বিজ্ঞানীদের কিছু পরীক্ষণের উপর। এখন যদিও পরমাণুকে ভেঙ্গে শুধু ইলেকট্রনই পাওযা যায় না, তবু থমসনের সাহসী মতটা দাঁড়িয়ে গেল। ক্যাথোড রশ্মি আসলেই পরমাণুর জড় উপাদানের প্রবাহ।
১৯০০ সাল। বার্লিনের তাত্ত্বিক পদার্থবিদ ম্যাক্স প্ল্যাংক দেখান, পরমাণুকে যদি যথেষ্ট পরিমাণ আন্দোলিত করা হয় যেমন এটি উজ্জ্বল হয়ে উঠা পর্যন্ত উত্তপ্ত করার মাধ্যমে, তবে এর শক্তিকে একটি নির্দিষ্ট এককে পরিমাপ করা যায়। রহস্যময় শব্দ ‘কোয়ান্টা’ শব্দটির উৎপত্তি প্ল্যাঙ্কের হাতেই। তিনি শক্তির প্যাকেটগুলোকে বললেন ‘কোয়ান্টা’। এ জন্যেই এখন পরমাণুর অভ্যন্তরীণ জগতের শাস্ত্রকে বলা হয় কোয়ান্টাম বলবিদ্যা।
ততো দিনে আলো কে নিয়েও ইতোমধ্যেই তিন তিনটি তত্ত্ব দেওয়া হয়ে গিয়েছিল। সর্বশেষ তরঙ্গ তত্ত্বেও আলোকে বলা হলো কণা ও তরঙ্গের সমন্বয়। ৪র্থ তত্ত্ব হিসেবে এবার এলো আইন্সটাইনের কোয়ান্টাম তত্ত্ব যেখানে আলো হচ্ছে কোয়ান্টায় গঠিত বিচ্ছিন্ন কণিকা, পদার্থবিদরা যাকে পরে নাম দিলেন ফোটন (Photon)। ১৯০৫ সালে আইন্সটাইন দেখালেন আলোক শোষণ করে পরমাণু ইলেকট্রন নির্গত করতে পারে। ফটোতড়িৎ বা আলোকতড়িৎ ক্রিয়া (Photoelectric Effect) নামক এই যুগান্তকারী আবিষ্কার তাঁকে এনে দেয় ১৯২১ সালের নোবেল। আলো কণা নাকি তরঙ্গ- এই বিতর্কে অনেক বছর ধরে উত্তপ্ত থাকলো বিজ্ঞানপাড়া। পরে মীমাংসা হলো- কণা তরঙ্গ দুটোই, তবে একসাথে দুটো নয়।। নির্ভর করবে পরীক্ষণ ব্যাবস্থার উপর।
১৯১১ সালে রাদারফোর্ডের মাথায় ঢুকল আরেক কুবুদ্ধি (!)। পরমাণুকে আঘাত করতে হবে আলফা রশ্মি দিয়ে। আলফা কণার উৎস হিসেব ব্যবহার করলেন রেডিয়াম। এই আলফা কণাকে লেলিয়ে দিলেন পাতলা স্বর্ণপাতের উপর। স্বর্ণপাতও রুখে দাঁড়ালো। দেখা গেল, খুব কম আলফাই পাতকে ভেদ করতে পারল। অধিকাংশ আলফা কণাই পাতের সীমানা পার হতে গিয়ে বেঁকে গেল।
আবার খুব কমসংখ্যক কণিকাই সোজা পেছনে ফিরে আসলো। [ঘটনাটির ভিডিও দেখতে লগ অন করো ব্যাপনের ফেসবুক পেইজের ভিডিও সেকশনে] এবার রাদারফোর্ড ঘোষণা করলেন নিশ্চয়ই পরমাণুর কেন্দ্রে ধনাত্মক চার্জ বিশিষ্ট কেউ আছে যে একই চার্জ বিশিষ্ট আলফাকে বিকর্ষণ করছে। ঋণাত্মক ইলেকট্রনেরা ঐ ধনাত্মক বস্তুকে (যাতে আছে ধনাত্মক প্রোটন) কেন্দ্র করে সৌরজগতের গ্রহদের ন্যায় ঘুরছে।
কিন্তু সৌরজগতের তুলনাটি বিজ্ঞানীরা মানলেন না। একেতো গ্রহদের পারমাণবিক কণার মতো চার্জ নেই। উপরন্তু, বিপরীত চার্জের আকর্ষণের দরুণ ইলেকট্রন ক্রমাগত শক্তি হারিয়ে প্যাঁচানো পথে নিউক্লিয়াসে এসে পতিত হবার কথা। কিন্তু তা হচ্ছে না। এছাড়া, সেরকম ক্ষেত্রে পরমাণুর রঙের বর্ণালী দেখা যাবার কথা। কিন্তু কোথায় সে বর্ণালী?
১৯১২ সাল। এসব প্রশ্নের জবাব নিয়ে হাজির হলেন ড্যানিশ বিজ্ঞানী নিলস বোর। বললেন- ইলেকট্রনেরা দিশা হারিয়ে নিউক্লিয়াসে গিয়ে পতিত হয় না। এটাতো সবাই জানে তাহলে তাঁর কৃতিত্ব কী? পতিত যদি না হয়, তবে আসলে ঘটে কী? তিনি দিলেন সেটারই কিছু বিশেষ নিয়ম।
বোর বললেন, এই নিয়মগুলো দেখে অসম্ভব মনে হচ্ছে। কিন্তু এরাই ঠিক করে পরমাণুতে কী ঘটবে, কিভাবে ঘটবে। অতএব, ধরে নিন নিয়মগুলো সঠিক।
তাঁর দু’খানা নিয়ম হলোঃ
১। ইলেকট্রন শুধু নিউক্লিয়াস থেকে একটি নির্দিষ্ট অনুমোদিত দূরত্বেই ঘুরতে পারে।
২। উচ্চ কক্ষপথ থেকে নিম্ন কক্ষপথে এসে পড়লে ইলেকট্রন শক্তি হারায়। উল্টোভাবে শক্তি অর্জন করে যদি যেতে পারে উপরের কক্ষপথে। নিউক্লিয়াসে পতিত না হবার এটাই কারণ।
একটি নির্দিষ্ট সময়ে ইলেকট্রন একটিই কক্ষপথে থাকতে পারে। যখনি ঝাঁপ দিয়ে আরেক কক্ষপথে ছুটে যায় নির্গত হয় আলো- কোন বক্রপথ অনুসরণ করে নয়, সোজা নাক বরাবর। ১৯২০ সালের মধ্যেই পরমাণু নিয়ে আরো পরীক্ষা হয়ে গেল। বোরের মডেলে পাওয়া গেলো ত্রুটি যা ভারী মৌলের গঠন ব্যাখ্যা করার জন্যে উপযোগী নয়। এবার বোর এবং জার্মান বিজ্ঞানী আর্নল্ড সমারফিল্ড মিলে বোরের প্রাথমিক মডেলকে আরো বিস্তৃত করলেন। বিস্তৃত মডেল মতে, ইলেকট্রন শুধু নির্দিষ্ট কক্ষপথে পরিভ্রমণই করে না বরং কক্ষপথের রয়েছে বিভিন্ন আকৃতি এবং চৌম্বক ক্ষেত্রের প্রভাবে তারা বেঁকে যেতে পারে। কক্ষপথের অবস্থা বর্ণনা করার জন্যে অবতারণা করা হলো ৩টি কোয়ান্টাম সংখ্যার। সেগুলো হল- কক্ষপথের ক্রম (n), আকৃতি(l) এবং বক্রতা (m)।
পরমাণু নিয়ে গরু খোঁজা (গবেষণা) অবশ্য চলতেই থাকলো। যেমন, ১৯২৪ সালে অস্ট্রিয়ান পদার্থবিদ উলফগ্যাং পাউলি প্রস্তাব দিলেন আরেকটি কোয়ান্টাম সংখ্যার। এটি হলো পরমাণুর ঘুর্ণন (Spin-s)। ইলেকট্রন হয় ঘড়ির কাঁটার দিকে নয়তো বিপরীতে ঘুরবে। তিনি আরো বললেন, কোন দুটি ইলেকট্রনের প্রথম তিনটি অবস্থা একই হয়ে গেলেও ৪র্থ অবস্থা তথা স্পিন ভিন্ন হবেই হবে। একে বলে পাউলির বর্জন নীতি। এর জন্যেই তিনি নোবেলে ভূষিত হন ১৯৪৫ সালে। এরপরে পরমাণুর ধারণা আরো ব্যাপক বিস্তৃত হলো। যেমন, ১৯২৪ সালে ডি ব্রগলি বললেন, আলো যদি একই সাথে কণা ও তরঙ্গ হতে পারে তবে ইলেকট্রন কেন নয়? ১৯২৭ সালে হাইজেনবার্গ দিলেন অনিশ্চয়তা নীতি (Heisenberg’s uncertainty principle)। এই তত্ত্বের বক্তব্য হচ্ছে, কোনো পরীক্ষার মাধ্যমেই কোন কোয়ান্টাম কণার একই সাথে অবস্থান ও ভরবেগ জানা সম্ভব নয়।
পরমাণুর চার্জহীন কণা নিউট্রন আবিষ্কার হলো চ্যাডউইকের হাত ধরে ১৯৩২ সালে। ১৯২৮ সালে পল ডিরাক কল্পনা করলেন ধনাত্মক চার্জযুক্ত ইলেকট্রনের। ১৯৩২ সালে কার্ল অ্যান্ডারসন প্রমাণ করলেন ডিরাকের কল্পনা অমূলক ছিল না। ইলেকট্রনের বিপরীত চার্জবিশিষ্ট প্রতিকণা হলো অ্যান্টি-ইলেকট্রন যার অপর নাম পজিট্রন। পরে জানা গেল, শুধু ইলেকট্রন নয় সব কণারই প্রতিকণা (Anti-Particle) আছে যার চার্জ হয় বিপরীত। কারণ ১৯৫৫ সালে পাওয়া গেলো অ্যান্টি-প্রোটন এবং পরবর্তীতে অ্যান্টি-নিউট্রন।
এখনতো আমরা জানি, পরমাণু ‘পরম অণু’ নয়। পরম অণু এর অংশ প্রোটন না নিউট্রনও পরম নয়। এরা আবার গঠিত কোয়ার্ক দিয়ে। কোয়ার্ক আছে আবার ৬ রকম। থাক! সেসব গল্প করার আরো সময় সময় পাওয়া যাবে যদি না ২৫ তারিখের ভূমিকম্পের মতো আর কোন…দূর! কী অলুক্ষণে ভাবনা! আল্লাহ্ ভরসা। যাই হোক, পরমাণু নিয়ে আরো তদন্ত চললেও, বোর যা করেছেন তা নোবেল পুরস্কার জিতে নেবার জন্যে যথেষ্ট।
পর্যায় সারণির ১০৭ নং মৌলের নাম কী বলো দেখি? ঠিক বলেছো- বোরিয়াম। হ্যাঁ, আমাদের আজকের আলোচিত বিজ্ঞানীর স্মরণেই এই নামকরণ। অসামান্য প্রতিভাধর এই বিজ্ঞানীর জন্ম ডেনমার্কের বিখ্যাত কোপেনহেগেন শহরে ১৮৮৫ সালের অক্টোবরে। পুরো নাম নিলস হেনরিক ডেভিড বোর। নোবেল প্রাইজ ছাড়াও তিনি পেয়েছেন আরো বহু পুরস্কার। যেমন, ১৯২১ সালে হিউজেস মেডাল, ১৯২৩ সালে ম্যটিউকি মেডাল, ১৯২৬ সালে ফ্রাংক্লিন মেডাল, ১৯৫৭ সালে অ্যাটমস ফর পিস অ্যাওয়ার্ড, ১৯৬১ সালে সোনিং প্রাইজ ইত্যাদি।
বোর নিজস্ব গবেষণা থেকেই মত প্রকাশ করেছিলেন যে ইলেকট্রন কক্ষপথ বদল করার কারণেই পরমাণু থেকে তড়িৎ চৌম্বক বিকিরণ নির্গত হয়। যদিও পরবর্তীতে অনেকেই পরমাণুর গবেষণায় তাঁকে ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন, তবু বোরের গবেষণাই এই ক্ষেত্রে ভিত্তি দাঁড় করিয়ে দেয়। বোর ম্যানচেস্টারের ভিকটোরিয়া ইউনিভার্সিটিতে কিছু দিন শিক্ষকতা করেন। পরে পুনরায় ১৯১৬ সালে কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনায় যোগ দেন। এখানেই তিনি ১৯২০ সালে তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান ইন্সটিটিউট গড়ে তোলেন। জীবেনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি এর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। কণা পদার্থবিদ্যা নিয়ে গবেষণারত প্রতিষ্ঠান সার্নের প্রতিষ্ঠায়ও রয়েছে তাঁর অবদান। পারমাণবিক শক্তির অপব্যাবহার রোধেও তাঁর প্রচেষ্টা ছিল লক্ষ্যণীয়। এর দরুণই তিনি ১৯৫৭ সালে Atoms for Peace Award লাভ করেন।
বোর প্রচুর লেখালেখি করতেন। তাঁর ১০০ টিরও অধিক প্রকাশনা ছিল। পরমাণুর নিউক্লিয়াসে গতির বিবরণ দিয়ে বোরের ছেলেও নোবেল পুরস্কার জেতেন ১৯৭৫ সালে। ১৯৬২ সালে ৭৭ বছর বয়সে বিজ্ঞানী নিলস বোর পৃথিবীকে ছেড়ে চলে যান।
No Comment