| মু. মেহেদী হাসান |
সংক্ষিপ্ত প্রোফাইলঃ
প্রতিষ্ঠাকালঃ ১৯৫৫ সাল
পূর্ণ নামঃ Bangladesh Council of Scientific and Industrial Research (BCSIR)
উল্লেখযোগ্য উদ্ভাবনঃ হার্বাল এন্টি-ডায়াবেটিক, হার্বাল বাসক, স্টেভিয়া সুইটনার, ত্রিফলা হেলথ ড্রিংক, ফ্রুটি পাপায়া, হার্বাল মিন্ট বাম, স্লেরিলেজিং ফার্টিলাইজার
সর্বোচ্চ কতৃপক্ষঃ চেয়ারম্যান
বর্তমান চেয়ারম্যানঃ ড. এ কে এম আসাদুজ্জামান
বোর্ডঃ একজন চেয়ারম্যান ও চারজন সদস্য
প্রধান কার্যালয়ঃ সায়েন্সল্যাব, ঢাকা
ওয়েবসাইটঃ www.bcsir.gov.bd
বাংলাদেশে বিজ্ঞান চর্চার সুযোগ সীমিত- এটা যেমন সত্য তেমনি এটাও সত্য যে আমরা প্রাপ্ত সুযোগ ঠিক মতো কাজেও লাগাই না। বাংলাদেশেই এমন বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান আছে, চাইলে যেখান থেকে সহায়তা নিয়ে তুমি বিজ্ঞান চর্চার বিকাশ ঘটাতে পারো।
বিজ্ঞান চর্চা ও গবেষণামূলক এমন একটি প্রতিষ্ঠানের কথাই বলছি আজ।
জাতীয় শিল্পোন্নয়নে স্বয়ংসর্ম্পূণতা অর্জনের লক্ষ্যে বহুমুখী বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করার লক্ষ্যে ১৯৫৫ সালে তদানীন্তন পাকিস্তান কাউন্সিল অব সায়েন্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ (পিসিএসআইআর) এর সহ-প্রতিষ্ঠান হিসেবে ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত হয় পুর্বাঞ্চলীয় ল্যবরেটরি। পরর্বতীতে পর্যায়ক্রমে ১৯৬৫ সালে চট্রগ্রামে এবং ১৯৬৭ সালে রাজশাহীতে এর শাখা প্রতিষ্ঠিত হয়। স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে এটি বাংলাদেশ কাউন্সিল অব সায়েন্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রির্সাচ (বিসিএসআইআর) নাম ধারণ করে। ১৯৭৮ সালে এটি পরিণত হয় স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে। পরর্বতীতে ২০১৩ সালে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ আইন ২০১৩ প্রণীত হয়।
পরিষদের অধীনে দশটি সহ-গবেষণা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এগুলোর মধ্যে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে প্রতিষ্ঠানের মূল নামে তিনটি গবেষণাগার ছাড়াও ঢাকা, সাভার ও জয়পুরহাটে রয়েছে আরো ৭টি সহ-গবেষণা প্রতিষ্ঠান। যেমন ঢাকার খাদ্য, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ইনস্টিটিউট , সাভারের লেদার রিসার্চ ইনস্টিটিউট,ডেজিগনেটেড রেফারেন্স ইনস্টিটিউট ফর কেমিক্যল মেজারমেন্ট (DRICM) ইত্যাদি।
বিসিএসআইআর গবেষণাগার, ঢাকাঃ
বর্তমান বিসিএসআইআর গবেষণাগার, ঢাকা ১৯৫৫ সালে তৎকালিন পিসিএসআইআর এর অধীনে ইস্ট রিজিওনাল ল্যাবরেটরিজ নামে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। এই গবেষণাগারে বায়োলজিক্যাল, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফিজিক্স, কেমিক্যাল রির্সাচ, ফার্মাসিউটিক্যাল সাইন্সেস রির্সাচ ইত্যাদি সহ ৮টি রিসার্স ডিভিশন রয়েছে।
২০১২ সালের ১০ জুন আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য ও বিশ্ববাণিজ্যের আওতায় শিল্পক্ষেত্রে গৃহীত বিভিন্ন স্বীকৃত মান অনুসরণ করেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ডিআরআইসিএম (DRICM) । বিশ্বমানের এই ল্যাবরেটরি ইতিমধ্যেই ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, জাতিসংঘসহ দেশি-বিদেশি বহু সংস্থা, বিজ্ঞানী-শিক্ষাবিদ এবং শিল্প প্রতিষ্ঠানের প্রশংসা কুড়িয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি ১০ অক্টোবর ২০১২ আন্তর্জাতিক সংস্থা BIPM (International Bureau of Weights and Measures) ও ৭ মে ২০১৩ তে এশিয়া প্যাসিফিক মেট্রোলজি প্রোগ্রাম এর সদস্যপদ লাভ করে।
বিসিএসআইআর গবেষণাগার, চট্রগ্রামঃ
বিসিএসআইআর গবেষণাগারের চট্রগ্রাম শাখার আত্মপ্রকাশের পর থেক মূলত ঔষধ ও সুগন্ধি উদ্ভিদের উপর গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। বিভিন্ন ফল-মূল, শাকসবজি ও সামুদ্রিক উৎস হতে মূল্যবান ভেষজ গুনাগুণ সম্পন্ন জৈব উপাদান আহরণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও হার্বাল পণ্য উৎপাদনে বিভিন্ন পদ্ধতি উদ্ভাবনে গবেষণাগারে বিজ্ঞানীরা কাজ করে যাচ্ছেন। প্রতিষ্ঠানটির এই শাখার রয়েছে হার্বাল এন্টি-ডায়াবেটিক, স্টেভিয়া সুইটনার ফ্রুট পাপিয়া ইত্যাদি সহ অনেকগুলো উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার।
বিসিএসআইআর গবেষণাগার, রাজশাহীঃ
এই গবেষণাগারের মূল উদ্দেশ্য হলো সহজলভ্য স্থানীয় কাঁচামালের সর্বোচ্চ ব্যবহার করে এর বাণিজ্যিক উৎপাদন বৃদ্ধি করা। এর অধীনে প্রধানত লাক্ষা গবেষণা; তেল, চর্বি ও মোম গবেষণা এবং আঁশ গবেষণার কাজে নিয়োজিত তিনটি গবেষণা বিভাগ পরিচালিত হচ্ছে। এছাড়াও ১৯৭৬ সালে ফল প্রক্রিয়াকরণ ও সংরক্ষণ গবেষণা বিভাগ নামে আরও একটি বিভাগ এর অন্তর্ভূক্ত করা হয়।
খাদ্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ইনস্টিটিউট (আইএফএসটি), ঢাকাঃ
এটি দেশের খাদ্য ও প্রযুক্তি নির্ভর গবেষণা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে বৃহত্তম গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃত। এই ইনিস্টিটিউট কর্তৃক উদ্ভাবিত “ফরমালিন সনাক্তকরণ কিট” যথাযথ সময়ে বিভিন্ন সরকারী, স্যানিটারী ইন্সপেক্ট ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাহিদা মোতাবেক সরবরাহ করা হচ্ছে। এছাড়াও বর্তমানে এই ইনিস্টিটিউটে মানব দেহের ক্ষতিকারক ফরমালিনের বিকল্প হিসেবে ন্যাচারাল প্রিজার্ভেটিভ এর উদ্ভাবনের কাজ সন্তোষজনকভাবে এগিয়ে চলছে।
জ্বালানি গবেষণা ও উন্নয়ন ইনস্টিটিউট (আইএফআরডি), ঢাকাঃ
এই ইনিষ্টিটিউট বায়োগ্যাস, বায়োমাস, বায়োফুয়েল, সৌরশক্তি, বায়ুশক্তিসহ প্রায় সকল নবায়নযোগ্য শক্তির উপর গবেষণা প্রভৃতি কর্মকান্ডে নিয়োজিত আছে । প্রতিষ্ঠানটি কর্তৃক উদ্ভাবিত বিভিন্ন পণ্য ও প্রযুক্তির মধ্যে রয়েছে বায়োগ্যাস প্রযুক্তি, বিভিন্ন মডেলের উন্নত চুলা, ব্রেক ওয়েল, সোলার ওভেন, সৌরচুল্লী, সোলার ড্রায়ার, এনার্জি সেভিং এলইডি লাইট, পোর্টেবল বায়োগ্যাস ডাইজেস্টর ইত্যাদি।
পাইলট প্লান্ট এন্ড প্রসেস ডেভেলপমেন্ট সেন্টার (পিপিএন্ডপিডিসি), ঢাকাঃ
এখানে পাইলট প্লান্ট স্টাডির মাধ্যমে বিভিন্ন গবেষণাগারে উদ্ভাবিত বাণিজ্যিক সম্ভাবনাময় পদ্ধতি সমূহের শিল্পায়নের জন্য আর্থিক ও কারিগরি সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়। এই বিভাগের গবেষণার উল্লেখযোগ্য অংশগুলোর মধ্যে রয়েছে এলুমিনিয়াম ভিত্তিক গ্রীজ, লেমন গ্রাস অয়েল, ইপক্সিডাইজড সয়াবিন অয়েল, আল্ট্রা মেরিন ব্লু ইত্যাদি।
কাচ ও সিরামিক গবেষণা ও পরীন ইনস্টিটিউট (আইজিসিআরটি), ঢাকা
২০০১ সালের অক্টোবর মাসে এই বিভাগটি চালুর পর থেকে এর অধীনে গ্যাস, সিরামিক, রিফ্র্যাক্টরিজ এ্যান্ড স্ট্রাকচারাল সিরামিক, এনামেল রির্সাচ ডিভিশনসহ মোট ৬টি বিভাগ ভ পরিচালি হচ্ছে।
চামড়া গবেষণা ইনষ্টিটিউট বিসিএসআইআর নায়ারহাট, সাভারঃ
এই প্রতিষ্ঠানটি চামড়া, চামড়াজাত দ্রব্য, ফুটওয়্যার, লেদার প্রসেসিং কেমিক্যালস এবং ট্যানারী বর্জ্যের উপর মৌলিক ও ফলিত পর্যায়ের গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে গবেষণালব্ধ ফলাফল চামড়া সেক্টরে হস্তান্তর করে চামড়া খাত হতে অধিকতর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি এবং চামড়া ও চামড়াজাত শিল্পের সার্বিক উন্নয়নের সহায়ক ভূমিকা পালনকারি দেশের একমাত্র প্রতিষ্ঠান।
এই ইনিষ্টিটিউটের গবেষণা ও উন্নয়ন কার্যক্রম (R&D) ছয়টি ডিভিশনের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। এগুলো হচ্ছে,
লেদার প্রসেসিং ডিভিশন, ট্যানিং ম্যাটেরিয়াল ডিভিশন, কেমিক্যাল রির্সাস ডিভিশন, এনিম্যাল বাই প্রোডাক্ট রিসার্চ ডিভিশ, লেদার প্রডাক্টস ডিভিশন, পাইলট প্লান্ট ডিভিশন
ইনিস্টিটিউট অব মাইনিং, মিনারেলজি এন্ড মেটালার্জি (আইএমএমএম), বিসিএসআইঅর, জয়পুরহাটঃ
বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গের খনি প্রধান জেলা জয়পুরহাটে গড়ে উঠেছে দেশের প্রথম ও একমাত্র খনি, খনিজ ও ধাতব গবেষণা বিষয়ক এই গবেষণা প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে, দেশের খনি ও খনিজ দ্রব্যের অনুসন্ধান, গুণাগুণ বিশ্লেষণ এবং ব্যবহার নিশ্চিতকরণ।
এছাড়াও প্রুতিষ্ঠানটির রয়েছে আরো কিছু গবেষণাধর্মী প্রতিষ্ঠান।
এ পর্যন্ত বিসিএসআইআর–এর গবেষণা ও উন্নয়নে অবদানঃ
ইজারা প্রদত্ত শিল্প পদ্ধতিসমূহ : ৪০১টি
গৃহীত শিল্প পদ্ধতি সংখ্যা: ৯৪৮
গৃহীত পেটেন্ট সমূহ: ৩৬১
বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ কর্তৃক প্রদেয় সেবা | |
সেবার ধরণ | সেবার নাম |
ফেলোশিপ
(৫০টি) |
বিসিএসআইআর পোষ্ট ডক্টরাল ফেলোশিপ-৩টি
ড.মো:কুদরত-এ-খুদা ফেলোশিপ-৩টি প্রফেসর ড.নুরুল আবসার খান পোষ্ট গ্রাজ্যুয়েট ফেলোশিপ-১৫টি প্রফেসর মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ স্মৃতি ফেলোশিপ-১৩টি ড.আব্দুল্লাহ আল-মুতি শরফুদ্দিন স্মৃতি ফেলোশিপ-১৩টি |
গবেষণা মন্জুরী | বিসিএসআইআর বিষয়সংশ্লিষ্ট গবেষণা কাজে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণের গবেষণা মন্জুরী দেয়া। |
খুদে বিজ্ঞানী তৈরী ও বিজ্ঞান মেলা | খুদে বিজ্ঞানীদের গবেষণা সুবিধা দেয়া হয় এবং ক্ষুদে বিজ্ঞানিদের উৎসাহিত করার জন্য প্রতি বছর রাজশাহী ও চট্রগ্রামে গবেষণাগার এবং জয়পুরহাটস্থ ইনিষ্টিটিউট অব মাইনিং, মিনারেলজি এন্ড মেটার্লাজি এ আঞ্চলিক মেলা এবং ঢাকায় কেন্দ্রিয় বিজ্ঞান মেলার আয়োজন করা হয়। |
গবেষণাগার পরির্দশন | বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানমনস্কতা সৃষ্টির জন্য গবেষণাগার পরিদর্শনের সুযোগ দেয়া। |
পাঠাগার সুবিধা | বিজ্ঞান বিষয়ক বই ও জার্নাল সমৃদ্ধ আধুনিক লাইব্রেরি সর্বসাধারণের সুবিধার জন্য সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে। |
বিজ্ঞান বিষয়ক প্রকাশনা | ১. বাংলাদেশ জার্নাল অব সায়েন্টিফিক এন্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রির্সাচ নামক জার্নালে বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ প্রকাশ।
২. বিজ্ঞানকে জনপ্রিয় করে তোলার লক্ষ্যে ছোটদের জন্য বিজ্ঞানের জয়যাত্রা এবং বড়দের জন্য পুরোগামী বিজ্ঞান নামক ম্যাগাজিন প্রকাশ। ৩. বিজ্ঞান বিষয়ক বিভিন্ন বই পুস্তক প্রকাশ। |
বন্ধুরা! বিসিএসআইআরের বহুমুখী কাজের ধরণ সম্পর্কে জানলে। এতে তোমাদের কী লাভ, তাই না? এই প্রতিষ্ঠানের অধীনেই পরিচালিত হয়ে দেশের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান মেলা, যেখানে তুমি তোমার উদ্ভাবনী শক্তির বিকাশ ঘটিয়ে তাক লাগিয়ে দিতে পারো পুরো দেশকে। পরিদর্শন করতে পারো প্রতিষ্ঠানের অত্যাধুনিক গবেষণাগার। বিজ্ঞান বিষয়ে তোমার জ্ঞান বাড়িয়ে নেবার জন্যে নিতে পারো সমৃদ্ধ লাইব্রেরির সহায়তা। তোমার লেখক হবার ইচ্ছে? লেখা পাঠাতে পারো এখানকার ম্যাগাজিনে (তাই বলে আবার ব্যাপনে পাঠাতেও ভুলো না যেনো! )।
No Comment