সম্পাদকীয় [অক্টোবর – নভেম্বর ২০১৫]
বর্ষ ১ | সংখ্যা ৪
অতীতে যেভাবে আমাদের এ উপমহাদেশ থেকে বড় বড় বিজ্ঞানী তৈরি হয়েছে, সুখের কথা হচ্ছে এখনও সে ধারাবাহিকতা চলমান আছে। সেকালের উদাহরণে যদি জগদীশচন্দ্র বসুকে উল্লেখ করি, একালে ডঃ জাহিদ হাসানদেরকে উল্লেখ করা চলে। আর আগামী দিনের কারো নাম উল্লেখ করতে চাইলে হয়ত তোমার নামটাই বলতে হবে। আর সে তোমাকে প্রস্তুতি নিতে অনুরোধ করছি এখন থেকেই…। হঠাৎ তোমার নামের কথা বলায় কি অবাক হচ্ছো! তাহলে শোন, বংশ পরম্পরায় মানুষের মধ্যে বৈশিষ্ট্যেরও প্রবাহ তৈরি হয়। যার কারণ সম্পর্কে অনুসন্ধান করতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা দিনে দিনে অনেক কিছু আবিষ্কার করেছেন। সে আবিষ্কার একদিনে হয়নি। হয়েছে কয়েকধাপে। প্রথমে ক্রমোসোম, তারপর তার ভেতরের ডিএনএ অতঃপর তারও মধ্যের জিনকেই খুঁজে পাওয়া গেছে বৈশিষ্ট্যের ধারক হিসাবে। তো, বুঝতেই পারছ বংশ পরম্পরায় তোমার কথা আসতেই পারে। তবে, বৈশিষ্ট্য তো তোমার মধ্যে বিদ্যমান আছেই, এখন শুধু উৎকর্ষ সাধনের জন্য দরকার যথাযথ সামগ্রীক প্রচেষ্টা আর অধ্যাবসায়ের।
ইয়াকট্রলের মধ্যে স্বপ্নের নায়ক সাইথ মেহলাইনকে স্বপ্নচারী লেখক বাংলাদেশী বলেই পরিচয় করে দিয়েছেন। তবে সে ঘটনা ঘটেছে ৩০৭১ সালে। আমি অবশ্য সাইথ মেহলাইনের পর্যায়ে তোমাদেরকে দেখতে এতোদিন দেরি করতে নারাজ। আসলে সাইন্স ফিকশন হওয়ায় লেখক হাসান সাঈদ এতোদিন দেরি করিয়েছেন; কিন্তু আমি বাস্তবের কথা বলতে চাচ্ছি তো, তাই একটু আগেভাগেই…। যাক স্বপ্ন ছেড়ে এবার বাস্তবে আসি। বাস্তবে আসতে না আসতেই উল্লেখ করতে হচ্ছে রাজশাহী কলেজের বন্ধু মাহমুদুন্নবীর সাফল্যের কথা। International Olympiad on Astronomy and Astrophysics-এ বাংলাদেশ দলের হয়ে ইতোমধ্যেই সাফল্যের সাথে ঘুরে এসেছে রোমানিয়া থেকে। ওর ভ্রমণ গল্পটি পড়ে চোখ বন্ধ করে তুমি নিজেও ওর সাথে ঘুরে আসতে পারো রোমানিয়া থেকে। আর সেই সাথে ভবিষ্যত সাইথ মেহলাইনের পর্যায়ে পৌঁছে যাওয়ার স্বপ্ন দেখলেও দেখতে পারো।
স্বপ্ন পূরণের জন্য বাস্তব পদক্ষেপ তো নিতেই হবে। সে বিষয়ে এসো আমরাও একটু ভেবে দেখি। বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য আমাদের দেশের যেসব শিক্ষার্থীরা যায়, তারা কিন্তু মেধার স্বাক্ষর রেখে চলেছে সব জায়গায়। তার মানে আমাদের মেধা আছে, দরকার শুধু পরিচর্যার। এদেশে গবেষণার অবকাঠামোগত ঘাটতি আছে বলে অনেকেই উচ্চশিক্ষা শেষে আর দেশে ফিরতে চান না। এভাবে ফিরতে না চাওয়ার পেছনের যে অন্যতম প্রধান কারণ তথা অবকাঠামোর অভাব-সে কারণ কি অনন্ত কালের জন্য চলতে থাকবে! যুগ যুগ ধরে সব প্রজন্মই কি অবকাঠামোগত সমস্যা অনুভব করে করেই জীবন কাটিয়ে দেবেন! এভাবে কি আসলেই চলতে পারে? আমাদের মধ্য থেকে কি কেউ এমন উদ্যোগ নিতে পারি না, যার ফলে ভবিষ্যত প্রজন্মকে আর এসব সমস্যার কথা উল্লেখ করতে হবে না? সে সাহসী উদ্যমী উদ্যোগীর আজ খুব বেশী প্রয়োজন। আসলে কাউকে না কাউকে তো শুরু করতেই হয়; সে শুরুটা না হয় তোমার হাত দিয়েই হোক। এখন থেকে চিন্তা লালন করলে হয়ত ভবিষ্যতে সে স্বপ্ন পূরণের কারিগর তুমিও হতে পারো।
যারা আমাদের এ সাময়িকীতে লিখে চলেছেন নিয়মিত, তাদের এক একটি লিখা আমাদের কাছে শুধু শত শব্দের পাণ্ডুলিপি নয়, বরং সে পান্ডুলিপির মধ্যে মিশে থাকে আমাদের স্বপ্ন, সে পান্ডুলিপির মধ্যে মিশে থাকে আমাদের আগামী দিনের বিখ্যাত সব বিজ্ঞান লেখকের সমাহার, আগামী দিনের জাতীয় বা আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান লেখক সমাবেশের, আগামী দিনের অগণিত বিজ্ঞান বইয়ের আর অগণিত নতুন নতুন বিজ্ঞান পাঠকের। আমরা এই একেকটি পাণ্ডুলিপির মধ্য দিয়ে বুনে থাকি এমনি বিরাট বিরাট সব স্বপ্ন। স্বপ্ন-কারিগর আমাদের সম্মানিত লেখকদের প্রতি তাই অনেক অনেক শুভ কামনা।
ব্যাপকভাবে স্বপ্ন দেখি ব্যাপন নিয়ে নামক এক স্বাপ্নিক শিরোনামে পরিচালিত মজার এক সেশনে মিলিত হয়েছিলাম ব্যাপন পরিবারের কিছু সদস্য। স্বপ্নের ইচ্ছেঘুড়ি ওড়ানোর এক মহেন্দ্রক্ষণে আমাদের কথাগুলো বাংলাদেশের বুকে বিজ্ঞানকে অনেক অনেক দূর এগিয়ে নেয়ার প্রত্যয়ই ঘোষণা করেছে। আর সে এগিয়ে যাওয়ার মূল কেন্দ্রবিন্দুতে যাদেরকে বিবেচনা করেছি আমরা, তারাই হচ্ছে সারাদেশের আজকের কিশোর কিশোরী বিজ্ঞানপ্রেমী শিক্ষার্থীরা অর্থাৎ তোমরা তথা আমাদের ব্যাপন বন্ধুরা।
তাই আহ্বান করি,
এসো বন্ধু-
স্বপ্নের বন্দরে ভেড়াও তোমার তরী।
একসাথে দাঁড় টেনে
বেয়ে যাব প্রেরণার ঠিকানা পানে।
No Comment