সংক্ষিপ্ত প্রোফাইলঃ
প্রতিষ্ঠাকালঃ ৪ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৮
প্রতিষ্টাতাঃ ল্যারি পেইজ ও সেরগেই ব্রিন
হেডকোয়ার্টারঃ মাউন্টেইন ভিউ, ক্যালিফোর্নিয়া, যুক্তরাষ্ট্র
২০১৪ সালে আয়ঃ ৬৬ বিলিয়ন ডলার
কর্মচারীর সংখ্যাঃ ৫৩,৬০০ জন
প্রাথমিক লক্ষ্যঃ বিশ্বের সব তথ্যকে জড় করে তা সবার জন্যে উন্মুক্ত ও ব্যবহারযোগ্য করা
মূল ওয়েবসাইটঃ www.google.com
অন্যান্য উল্লেখযোগ্য সেবাঃ ইউটিউব, ব্লগার, অ্যান্ড্রয়েড, অ্যাডসেন্স, জিমেইল, ক্রোম ব্রাউজার
গুগল কী?
এক কথায় এর উত্তর দেবার দিন এখন আর নেই। স্টানফোর্ড ইউনিভার্সিটির পিএইচডি অধ্যয়নরত দুই ছাত্র ল্যারি পেইজ ও সেরগেই ব্রিনের হাত ধরে একটি সার্চ ইঞ্জিন হিসেবে গুগলের আত্মপ্রকাশ ঘটলেও কালের স্রোতে আজ এটি পরিণত হয়েছে এক বিশাল মহীরুহে। হয়ে পড়েছে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের অবিচ্ছেদ্য বন্ধুতে। গুগলের সেবা বর্তমানে কতটা প্রয়োজনীয় এবং ব্যাপক তা বোঝা যায় ওয়েবসাইট র্যাংকিং এর সাইট alexa.com এর শীর্ষ ২০টি সাইটে গুগলের পরিচালিত সাতটির অধিক ডোমেইন দেখে। গুগলের অন্যনায় ডোমেইনগুলোও আছে উপরের দিকেই, প্রত্যেক দেশেই।
ল্যারি পেইজ ও সেরগেউ ব্রিন- দু’জনেই ছিলেন স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএচডি অধ্যয়নরত ছাত্র। প্রাথমিকভাবে এই সার্চ ইঞ্জিনটি স্ট্যানফোর্ডের ওয়েবসাইটে google.stanford.edu নামে ব্যবহৃত হত। পরবর্তীতে ১৫ সেপ্টেম্বর ১৯৯৭ সালে google.com ঠিকানাটি নিবন্ধিত হয়।
টেক্সট পড়ে তোমার কাছে কোন কিছু বুঝতে কঠিন লাগছে? চলে যাও ইউটিউবে। কাঙ্ক্ষিত টপিক লিখে সার্চ দাও। পেয়ে যাব হাজারো মজার ভিডিও। পাশাপাশি রয়েছে গান, মুভি, বিভিন্ন টিউটোরিয়ালসহ দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োজনীয় প্রায় সব কিছু নিয়ে ভিডিও। বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত সফটওয়্যার বিজ্ঞানী জায়েদ করিম প্রতিষ্ঠিত এই সাইটটি (ইউটিউব) গুগল কিনে নেয় ২০০৬ সালে।
তোমার লেখালেখির শখ? কিন্তু কোথায় লিখবে? ব্লগারে গিয়ে বানিয়ে ফেলো নিজের ব্লগ-গুগোলের ফ্রি সেবার সুবাদে। পাইরা ল্যাবসের প্রতিষ্ঠিত এই সার্ভিসটি ২০০৩ সালে কিনে নিয়ে সর্বসাধারণের জন্যে উন্মুক্ত করে দেয় গুগল।
বর্তমানে অন্যতম জনপ্রিয় মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম (ওএস) অ্যান্ড্রয়েড। অ্যাপলের নিয়ন্ত্রিত ওএস আইফোনকে বর্তমানে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিচ্ছে গুগলের এই সেবাটি।
তুমি নতুন কোন জায়গায় বেড়াতে যাবে। কিন্তু জায়গাটি ভালো চেনা নেই। তাতে কি, গুগল ম্যাপে দেখে নাও রাস্তাঘাট সবকিছু। কিছু দিন আগে উন্মোচিত স্ট্রিট ভিউ-এর মাধ্যমেতো ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরিয়ে রাস্তাঘাট একেবারে বাস্তবের মতই দেখে নেওয়া সম্ভব। এছাড়াও গুগল আর্থে রাস্তাঘাট দেখার পাশাপাশি পৃথিবীর সকল প্রান্তের স্যাটেলাইট দৃশ্য দেখা যায়। চাইলে মুড পাল্টে ঘুরে আসতে পারো চাঁদ, মঙ্গল কিংবা মহাকাশ থেকেও!
বর্তমানে চিঠিপত্রের দিন আর নেই। আমরা পাঠাই ইলেকট্রনিক মেইল তথা ইমেইল। বিভিন্ন ওয়েবসাইটের নিজস্ব মেইলিং সেবা থাকলেও অনেক বড় বড় প্রতিষ্ঠানই তাদের যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে কাজে লাগান গুগল মেইল তথা জিমেইল। ২০১৪ সালের এক হিসাব অনুযায়ী, আমেরিকার ৬০% কোম্পানিই ব্যবহার করে জিমেইল। ২০১৪ সালে গুগল প্লে-স্টোর থেকে প্রথম অ্যাপ হিসেবে জিমেইল ১০০ কোটি ডিভাইসে ইন্সটল হয়। বলাই বাহুল্য, বিনামূল্যের ইমেইল সেবায় গুগল অন্যদের তুলনায় অনেক এগিয়ে।
তোমার কাছে রয়েছে ব্যাপক ই-বুক, গান, ডকুমেন্টারি ইত্যাদি। রাখতে রাখতে কম্পিউটারের হার্ডডিস্কের পেট ভরে গেছে। তাহলে? ফাইলগুলো রেখে দাও গুগল ড্রাইভে। দেখার জন্যে তোমার নির্দিষ্ট কোন ডিভাইসে বাঁধা থাকাও লাগলো না। নেট সংযোগ থাকলেই যে কোন জায়গায় বসে তোমার ফাইলের সঙ্গ লাভ করতে পারবে।
ফেসবুক যোগাযোগের এক অনন্য মাধ্যম। গুগল কি ইন্টারনেটের এই জগতে অনুপস্থিত থাকতে পারে? না, সব খানেই তার থাকা চাই। তাই, ফেসবুককে টেক্কা দিতে ২০১১ সালে গুগল চালু করে গুগল প্লাস। দ্রুত ছড়িয়ে পড়া এই সাইট ২০১৩ সালের মধ্যেই লাভ করে ৫৪ কোটি ইউজার। ফেসবুককে ছাড়াতে না পারলেও বর্তমানে এটি অন্যতম প্রধান সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট।
কম্পিটারে সব কাজ করার জন্যই চাই একটি সফটওয়্যার। তুমি চাচ্ছো নেট ব্রাউজ করতে। তাহলেও চাই একটি ব্রাউজার। সেখানেও হাজির গুগল। ২০০৮ সালে গুগলের ব্রাউজার গুগল ক্রোম যাত্রা শুরু করে। বর্তমানে ৫১ শতাংশ ইন্টারনেট গ্রাহকের নেট দরজা এটি।
আসলে, সংক্ষেপে গুগলের বিস্তৃতি লিখে শেষ করা যাবে না। উপরোক্ত সেবাগুলো ছাড়াও এই ইন্টারনেট জায়ান্টের আরো উল্লেখযোগ্য সেবার মধ্যে আছে গুগল ট্রান্সলেইট, গুগল বুকস, ফিডবার্নার, গুগল ফর্ম, গুগল সাইট, গুগল কোড, গুগল নিউজ, গুগলের url শর্টেনার (goo.gl), গুগল ওয়েব ফন্ট, ক্যাপচা সেবা (reCAPTCHA), পিকাসা, গুগল মিউজিক, অ্যাড সার্ভিস যেমন- অ্যাডসেন্স, অ্যাডওয়ার্ড, অ্যাডমব ইত্যাদি।
এত বিশাল কার্যক্রম কিভাবে পরিচালনা করে গুগল? বিশ্বজুড়ে এর আছে ১০ লাখের উপর সার্ভার। যেই সার্চ ইঞ্জিন হিসেবে গুগলের জন্ম, এখনও সে ধরে রেখেছে সার্চের জগতের একচেটিয়া আধিপত্য। প্রতি দিন ৩০০ শো কোটি অনুসন্ধান জমা পড়ে গুগল সার্চে। গুগল সার্চ কিন্তু শুধু google.com দিয়েই হয় না। ১৮৯ দেশে সার্চের জন্যে রয়েছে এর আলাদা আলাদা ডোমেইন। যেমন বাংলাদেশে google.com.bd। আর, মজার ব্যাপার হচ্ছে প্রতিটি দেশেই ওয়েবসাইট র্যাংকিং এর ক্ষেত্রে সেসব আঞ্চলিক ডোমেইন আছে একেবারে শীর্ষে।
No Comment