।ডাঃ মোঃ ফজলুল কবির পাভেল ও সৈকত দে।

অ্যালকোহল ও স্ট্রোক

স্ট্রোক আমাদের দেশে খুব পরিচিত অসুখ। প্রতিদিনই হাসপাতালে স্ট্রোকের অনেক রোগী দেখতে পাওয়া যায়। সারাবিশ্বে এবং আমাদের দেশে প্রতিবছর স্ট্রোকের কারণে অনেক মানুষ মৃত্যুবরণ করে। অনেকে অসুস্থ হয়ে কর্মক্ষমতা হারায়।

অথচ দেখা গেছে স্ট্রোক অনেকাংশে প্রতিরোধ করা যায়। স্ট্রোক হয়ে গেলে সে ব্যক্তি এবং পরিবারকে অবর্ণনীয় কষ্টের মধ্যে পড়তে হয়। তাই প্রতিরোধের দিকে সবার নজর দেয়া দরকার। স্ট্রোকের অন্যতম প্রধান কারণ অ্যালকোহল।

এখনই সবাইকে সচেতন হতে হবে। নাহলে অ্যালকোহল জনিত স্ট্রোক অনেক বৃদ্ধি পাবে। বয়স বাড়লে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে। ছেলেদের স্ট্রোক বেশি হয়। কিন্তু এসব কারণ পরিবর্তন করা যায় না। তাই যেসব কারণ পরিবর্তন করা যায় সেদিকেই আমাদের বেশি দৃষ্টি দিতে হবে।

ধূমপান ও অ্যালকোহল স্ট্রোকের অন্যতম প্রধান কারণ। কেউ যদি অ্যালকোহল ও ধূমপান বর্জন করে তবে তার স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেক কমে যাবে। স্ট্রোক প্রতিরোধ সহজ হবে। মদ পান করার পর পরই হৃদস্পন্দনের গতি অনেক বৃদ্ধি পায়। রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়।

গবেষকরা বলছেন, এতে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। গবেষণায় দেখা গেছে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকির সঙ্গে বেশিমাত্রায় মদ পান সম্পর্কিত। দিনে যদি কয়েকবার মদ পান করা হয় তাহলে এসব ঝুঁকি দ্বিগুণ বৃদ্ধি পায়।

স্ট্রোক থেকে বাঁচতে হলে শাকসবজি ও ফলমূল প্রচুর পরিমাণে খেতে হবে। ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকবে। চর্বি নিয়ন্ত্রণে থাকবে। স্ট্রোক কম হবে। লবণ কম খেতে হবে। লবণ কম খেলে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। আর উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখলে স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে যায়।

বয়স কিংবা পারিবারিক ইতিহাস এসবের উপর কারো হাত নেই। বয়স বাড়লে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে। বয়স তো আবার আটকানো যাবে না। কিন্তু ধূমপান ও অ্যালকোহল চাইলেই পরিত্যাগ করা সম্ভব। অ্যালকোহল গ্রহণ ধর্মেও নিষেধ করা আছে।

অ্যালকোহল শুধু যে স্ট্রোক রোগ করে তা নয় । বিভিন্ন জটিল রোগ হতে পারে অ্যালকোহল গ্রহণ করলে। তাই অ্যালকোহল থেকে দূরে থাকতেই হবে।

স্ট্রোকের বিভিন্ন কারণ আছে। এর মধ্যে কিছু আছে সেগুলো পরিবর্তন করা যায়। আর কিছু কারণ আছে সেগুলো পরিবর্তন করা যায় না। পরিবর্তন করা যায় এমন কারণের মধ্যে আছে:

ডায়াবেটিস                                                

এইসময়ের সবচেয়ে পরিচিত একটি রোগের নাম হল ‘ডায়াবেটিস’ বা ‘বহুমূত্র’ রোগ। এটি একটি বংশগতীয় রোগ। বহুমূত্র রোগ বা ডায়াবেটিস মেলিটাস (Diabetes mellitus) একটি হরমোন (Hormone) সংশ্লিষ্ট রোগ।

দেহের মধ্য অগ্ন্যাশয় যদি যথেষ্ট ইনসুলিন তৈরি করতে না পারে অথবা শরীর যদি উৎপন্ন ইনসুলিন ব্যবহারে ব্যর্থ হয়, তাহলে যে রোগ হয় তা হলো ‘ডায়াবেটিস’ বা ‘বহুমূত্র রোগ। তখন রক্তে চিনি বা শকর্রার উপস্থিতি জনিত অসামঞ্জস্যতা দেখা দেয়।

ইনসুলিনের ঘাটতিই হল এ রোগের মূল কথা। অগ্ন্যাশয় থেকে নিঃসৃত হরমোন ইনসুলিন, যার সহায়তায় দেহের কোষগুলো রক্ত থেকে গ্লুকোজকে নিতে সমর্থ হয়। এবং একে শক্তির জন্য ব্যবহার করতে পারে।

ইনসুলিন উৎপাদন বা ইনসুলিনের কাজ করার ক্ষমতা এর যে কোনো একটি কিংবা দুটোই যদি না হয়, তাহলে রক্তে গ্লুকোজ বাড়তে থাকে। একে নিয়ন্ত্রণ না করা গেলে নানা রকম জটিলতা ঘটে, দেহের টিস্যু ও যন্ত্র বিকল হতে থাকে।

ডায়াবেটিসের প্রকারভেদ

ডায়াবেটিস সাধারণত দুই ধরণের হয়ে থাকে।যথা:

১. টাইপ-১
২. টাইপ-২

১. টাইপ-১

টাইপ-১ বহুমূত্র হল অটোইমিউন রোগ। এ রোগে অগ্ন্যাশয়ের ইনসুলিন নিঃসরণকারী কোষগুলো ধ্বংস হয়ে যায়। তাই যাদের টাইপ-১ হয়, এদের দেহে ইনসুলিন খুবই কম উৎপাদিত হয়। এ জন্য রোগীকে বেঁচে থাকার জন্য ইনসুলিন ইনজেকশন বা ইনসুলিন পাম্প নিতে হয়।

শিশু ও তরুণদের মধ্যে এ ধরনের বহুমূত্র বেশি হয়। ১০-৩০ বছরের মধ্যে এটি দেখা দেয়। এটি মূলত জেনেটিক কারণে হয়ে থাকে। এর জন্য দায়ী হল HLADR 3 এবং HLADR 4 নামক দুটি জিন।

টাইপ-১ কে আবার দুই ভাগে ভাগ করা যায়

# টাইপ-১-এ: অটোইমিউনিটির জন্য বিটা কোষের ধংসের কারণে এই টাইপ-১-এ ডায়াবেটিস হয়ে থাকে ।

# টাইপ-১-বি: এটিও বিটা কোষের ধংসের কারণে হয়ে থাকে।

২. টাইপ-২

টাইপ-২ বহুমূত্র রোগের পেছনে থাকে মূলত ‘ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স’। টাইপ-২ রোগী তার শরীরে যে ইনসুলিন উৎপন্ন হয়, সেটি ব্যবহার করতে পারে না। এ ধরণের রোগীদের শরীরে দেহে ইনসুলিন তৈরি হয় কিন্তু কোষের চ্যানেল বন্ধ থাকে।

ব্যায়াম ও খাদ্যবিধির সাহায্যে একে প্রথমে মোকাবিলা করা হয়। তবে অনেক সময় মুখে খাওয়ার ওষুধ, এমনকি ইনসুলিন ইনজেকশন প্রয়োজন হয়। ৪০ বছর বা তারপরে এ ধরনের বহুমূত্র রোগ দেখা দেয়। মিষ্টি ও মিষ্টিজাতীয় পানীয় টাইপ-২ এর ঝুঁকি বাড়ায়।

খাবারে চর্বির ধরনও গুরুত্বপূর্ণ; স্যাচুরেটেড ফ্যাট ও ট্রান্স-ফ্যাটি অ্যাসিড ঝুঁকি বাড়ায় পক্ষান্তরে পলি-আনস্যাচুরেটেড ও মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট ঝুঁকি কমায়। অত্যধিক পরিমাণ সাদা ভাত খাওয়াও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়।

শারীরিক পরিশ্রম না করাও টাইপ-২ ডায়াবেটিসের অন্যতম একটা কারণ। বিশ্বজুড়ে ২৪৬ মিলিয়ন ডায়াবেটিস রোগীর ৯০ শতাংশের বেশি হল টাইপ-২ ডায়াবেটিস।

রোগ র্নিণয়:

মানুষের রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ সাধারণত ৩.৩ থেকে ৬.৯ মিলি.মোল/লি আর খাবার পর <৭.৮ মিলি.মোল/লি। কিন্তু যদি গ্লুকোজের পরিমাণ অভুক্ত অবস্থায় ৭ মিলি.মোল/লি আর খাবার পর >১১ মিলি.মোল/লি পাওয়া যায়, তবে তার ডায়াবেটিস আছে বলে ধরে নেওয়া হয়।

চিকিৎসা:

ডায়াবেটিসকে পুরোপুরি নিরাময় করা যায় না তবে তা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। আর তার জন্য 3D মেনে চলা প্রয়োজন।

১. Discipline (শৃঙ্খলা): এ রোগের রোগীদের অবশ্যই শৃঙ্খলা মেনে চলতে হবে। নিয়মিত শরীরের যত্ন নিতে হবে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। এ রোগের রোগীদের শরীরের ক্ষতস্থান তাড়াতাড়ি শুকায় না। তাই শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গের যত্ন নিতে হবে বিশেষ করে পায়ের।

২. Diet (খাদ্যাভ্যাস): নিয়মিত ব্যায়াম, খাদ্য গ্রহণে সচেতনতা ও সুষম খাবার গ্রহণ করতে হবে।

৩. Dose (ঔষধ): এ রোগের রোগীদের অবশ্যই সময়মত ঔষধ গ্রহণ করতে হবে এবং নিয়মিত ইনসুলিন প্রদান করতে হবে।

সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ২০১৮। বর্ষ ৪। সংখ্যা ৩

মস্তিষ্ক দখল

পরমাণু থেকে কণার জগতে

সিন্ধুতীরের মুক্তার কথা

ধূমকেতুর গল্প

মহাশুন্যে বসবাস

মহাশূন্যে বসবাস

লেজার রশ্মির গল্প

মাইনাস ওয়ান বিড়ম্বনা!

ব্লাড গ্রুপিং বৃত্তান্ত

ব্ল্যাক বক্স কীভাবে কাজ করে?

সুপার হাইওয়ে

পিথাগোরাসের ত্রয়ী

রোজার উপকারিতা

মহাকাশে কৃত্রিম উপগ্রহ

উইন্ড টারবাইনের গল্প

মস্তিষ্ক দখল

জার্নি টু দ্য বারমুডা ট্রায়াঙ্গল

জার্নি টু দ্য বারমুডা ট্রায়াঙ্গল

বিপজ্জনক ভাইরাসেরা

 

ছোট ম্যাজেলানিক ক্লাউড