।মোঃ মোখলেছুর রহমান।
(পর্ব-৬)
আজকে আমরা কিছু উন্নত প্রাণীর মস্তিষ্ক দখল সম্পর্কে জানবো। লেখার শুরুতে কিছু গুরত্বপূর্ণ বিষয় জেনে নেই। নিউরো-প্যারাসিটিলজি বিজ্ঞানের একটি উদীয়মান শাখা। এই শাখায় পরজীবীগুলো তাদের পোষকের স্নায়ুতন্ত্র নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। কি অবিশ্বাস্য, তাই না!
মনে করো তোমার একটি মটর গাড়ি আছে। এটা শুধু রাস্তায় চলাচল করতে পারে। তুমি যে শহরে আছো হঠাৎ লোকসংখ্যা অত্যাধিক বেড়ে গেলো। রাস্তা ঢাকা শহর থেকে আরো খারাপ হয়ে গেলো। যানবাহনের গতি প্রতি ঘন্টায় ২ কিলোমিটার।
যেখানে বর্তমান ঢাকায় যানবাহনের গতি ঘন্টায় ৬ কিলোমিটার। তোমার কি করা উচিৎ? আমি জানি না তুমি কি করবে। তবে আমি যা করবো তা শুনো। তোমার মটর গাড়ির জন্য নতুন সার্কিট বা নেটওয়ার্ক যুক্ত করবো। সাথে মটর গাড়ির সাথে পাখা লাগিয়ে দিবো।
অথবা উড়োজাহাজের নকশা করবো। কেমন হবে একটু কল্পনা করো। অবশ্যই ভালো। কমপক্ষে যানজট থেকে বেঁচে থাকা যাবে। কি বলো, তাই না?
চিত্র-১: উড়ন্ত মটর গাড়ি
স্নায়ুতন্ত্রের নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে আসা যাক। ওপরের গল্প থেকে একটা বিষয় শিক্ষা নেয়া যেতে পারে। নিউরাল-নেটওয়ার্ক বা স্নায়ুতন্ত্রের গঠন পরিবর্তন করলে অনেক কিছু করা সম্ভব। যার ফলে পরজীবীগুলো অন্য প্রজাতির (পোষক) বিশেষ আচরণগুলো পরিবর্তন করে ফেলে।
যেভাবে মটর গাড়িকে উড়োজাহাজ হিসেবে ব্যবহার করে আচরণে পরিবর্তন করা যায়। লক্ষ লক্ষ বছর ধরে এই ধরনের বিবর্তন পরজীবী-পোষক আন্তঃসম্পর্কে লক্ষ করা যায়। রাসায়নিক ক্রিয়া বিক্রিয়ার ওপর ভিত্তি করে পোষকের নিউরনের গঠন পরিবর্তন হয়েছে।
তোমরা জেনে অবাক হবে স্রষ্টার সেরা জীব মানুষ এর ব্যতিক্রম নয়। নিউরনের নিরোমোডোলিউশন আপ-ডাউনের মাধ্যমে নির্দিষ্ট আচরণগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিতে পারে। আশ্চর্যের বিষয় হলো পরজীবী পোষকের ফাংশনগুলোর ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া তত্ত্বাবধান করে।
মস্তিষ্কের নিউরোনাল সার্কিটগুলোতে ট্যাপ করে। এবং নিজেদের অজান্তেই নিজের বিরুদ্ধে কাজ করে। এর ফলাফল হিসেবে কিছু জীবকে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যায়। আবার কিছু জীবকে নেশাগ্রস্থ করে ফেলে। পূর্বের সংখ্যাগুলোতে এর বাস্তব উদাহরণ দেখেছি। বিভিন্ন প্রাণীর আত্মহত্যা- যা হৃদয়কে শিহরিত করে।
চিত্র-২: নিউরাল নেটওয়ার্ক
কিছু কীটপতঙ্গের কথা নিশ্চয় মনে আছে। তারপরও বলি তেলাপোকা, মৌমাছি, ঘাঁসফড়িং, পিঁপড়া ইত্যাদি নিজের শরীরে অন্যান্য কীটের ডিম রাখে। পরিশেষে আত্মহুতি দেয়। আরো কিছু পোকামাকড় লেডিবাগ, গুয়োপোকা, মাকড়শা ইত্যাদি অন্য কীটপতঙ্গের রক্ষাকর্মী হিসেবে লার্ভাকে পাহারা দেয়। এবং পরবর্তিতে তাদের খাবারে পরিণত হয়।
আমাকে একটা বিষয় খুব ব্যথিত করে। সমাজ দিন দিন নেশার দিকে ঝুঁকে পড়ছে। আর একবার যে এই পথে পা বাড়ায় তাকে ফেরানো অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। কেন এরকম হচ্ছে? নেশা জাতীয় দ্রব্যে বা এর উপকরণে কী আছে? যার ফলে মানুষকে ফিরানো যাচ্ছে না।
এ থেকে কি মুক্তি সম্ভব? আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে কি পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে? বিজ্ঞান কী বলে? এখানে কি মস্তিষ্ক দখল হচ্ছে না? হ্যাঁ, বন্ধুরা। এখানে মস্তিষ্ক দখল হচ্ছে। যা আমাদেরকে আত্মহত্যার দিকে ধাবিত করছে। কি সাংঘাতিক ব্যপার, তাই না!
এখন জানবো আমাদের এতো উন্নত মস্তিষ্ক অন্য কেউ কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে? গামা অ্যামিনোবুট্রিক অ্যাসিড মানব নিউরনগুলোর পরস্পর যোগাযোগ রক্ষা করে।
এই অ্যাসিড হলো একধরনের প্রোটিন। পেশির সংকোচন প্রসারণ এই প্রোটিনের ওপর নির্ভর করে থাকে। এই প্রোটিন নিউরোট্রন্সমিটার হিসেবে কাজ করে থাকে। এই গামা অ্যামিনোবুট্রিক অ্যাসিড ছাড়াও অনেক প্রোটিন নিউরোট্রন্সমিটার হিসেবে শরীরের তথ্য আদান প্রদান করে থাকে।
আশা করি নিউরোট্রান্সমিটার সম্পর্কে পরের সংখ্যায় বিস্তারিত থাকবে। এতোটুকু জেনে রাখ দেহের বিভিন্ন তথ্য আদান-প্রদানে নিউরোট্রান্সমিটারের ভূমিকা গুরত্বপূর্ণ। নিউরোট্রান্সমিটারে বিক্রিয়ার ফলে নিউরনের RNA পরিবর্তন হয়ে যায়। যা RNA বারকোড হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
তথ্য আদান প্রদানে কম-বেশি হলে কি হবে একবার অনুমান করো। তোমার বাবা বাজার থেকে চাল, ডাল ও কিছু তরকারি কেনার জন্য টাকা দিলো। তুমি সব টাকা খেলনা কিনে শেষ করে ফেলেছো। তাহলে তোমার পরিবার কি সেদিন খেতে পারবে?
তুমি আদর্শ পুত্র হিসেবে কি এটা করতে পারবে? অবশ্যই না। দেহ হচ্ছে একটি পরিবারে মতো। মাথা বা মস্তিষ্ক হচ্ছে পরিবারের প্রধান। মস্তিষ্কের প্রয়োজন গ্লকোজ। গ্লুকোজ (নিত্য দিনের সুষম খাবার) গ্রহণ না করে অন্য কোন নেশা জাতীয় দ্রব্য খেলে পরিবারের অভুক্ত থাকা স্বাভাবিক।
সুতরাং এই গামা অ্যামিনোবুট্রিক অ্যাসিড নেশা জাতীয় দ্রব্যের পার্টিকেল এর দ্বারা প্রভাবিত হয়। ফলে দেহের সাথে কেন্দ্রীয় মস্তিষ্কের মধ্যে তথ্য বিনিময়ে গোলযোগ বাঁধে। এবং দেহের চাহিদা অনুযায়ী খাদ্য গ্রহণসহ অন্যান্য সকল ক্রিয়া-বিক্রিয়াকে ব্যাহত করে।
নেশা জাতীয় দ্রব্যে কিছু পরজীবী আছে। যারা রাসায়নিক পদার্থ ক্ষরণ করে গামা অ্যামিনোবুট্রিক অ্যাসিডকে ক্ষতিগ্রস্থ করে।
চিত্র-৫: গামা অ্যামিনোবুট্রিক এসিডের মাইক্রোস্কোপিক ভিউ
এই প্রোটিন বেশিরভাগ মেরুদণ্ডী প্রাণির মস্তিষ্কে পাওয়া যায়। নেশা জাতীয় দ্রব্যের পরজীবী দ্বারা মস্তিষ্ক সংক্রমিত হয়। মানুষকে বেপরোয়া করে তোলে। হিতাহিত জ্ঞান থাকে না। পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট হতে পারে। সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে প্রত্যেককেই এই মরণঘাতী নেশা-দ্রব্য থেকে দূরে থাকা জরুরি। তা না হলে মানব সভ্যতা হুমকির মুখে পড়বে।
আজ এ পর্যন্ত। আগামী সংখ্যায় শুকরের মাংসের পরজীবী, ইঁদুর-বিড়ালের পরজীবী ইত্যাদির মানব মস্তিষ্কের ওপর প্রভাব সম্পর্কে জানবো। আশা করি তোমরা অপেক্ষায় থাকবে।
জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি ২০১৯। বর্ষ ৪। সংখ্যা ৫
No Comment