।নাসিম আহমেদ।
ফ্লাইং সসার ( Flying Saucer) চাকতি আকৃতির রহস্যময় ধাতব মহাকাশযান। অনেকে যাকে ভিনগ্রহী মহাকাশযান নামে চিনেন। খ্রিষ্টীয় বর্ষ (A.D) শুরুর আগে থেকে আমাদের মনে নানা জল্পনা-কল্পনা এই ফ্লাইং সসার নিয়ে যা মানুষ কে প্রতিনিয়ত হতবুদ্ধি করেছে, বাড়িয়েছে উত্তেজনা। আর আমরাও খুজে চলেছি এই ফ্লাইং সসারের উৎস । ফ্লাইং সসারই হোক বা গুপ্তচর বিমান কিংবা অশনাক্ত বিমানই হোক সবই UFO এর অন্তর্গত। UFO মানে হল Unidentified Flying Object অর্থাৎ, অশনাক্ত উড়ন্ত বস্তু।
উল্লেখযোগ্য ঘটনাঃ
খ্রিষ্টপূর্ব ১৫-তে মিশরের আকাশে অদ্ভুত আগুনের গোলা দেখেছিল মিশরীয়রা। সেনাবাহিনী সেই আগুনের গোলার উৎস খোঁজার অনেক চেষ্টা করল, কিন্তু তৎক্ষণাৎ সেগুলো উধাও। ষোড়শ শতকে কি কোন মহাকাশ যান ছিল? প্রশ্ন থেকে যায়।
এরপর থেকে নীল গ্রহের আকাশে এ ধরনের ঘটনার ঘনঘটা চলতে থাকে। ১৬৮৬ সালের জার্মানির লিপজিক আধিবাসিরা , ১৭৫৬ সালে সুইডেনের লোকেরা আকাশে উড়তে থাকা রহস্যময় ধাতববস্তু দেখতে পায়। UFO’র আজব আজব ঘটনা গুলো কেন জানি ইউরোপের আকাশেই বেশি দেখা যায়। ১৯৮০ সালে সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে রাতের আকাশে কালো ত্রিকোণাকৃতির বস্তু দেখা যেত , যার তিন কোণায় তিনটি লাল আলো আর মাঝে সবুজ আলো থাকত। তার অল্প কয়েকদিন পর সেগুলোও উধাও হয়ে গিয়েছিল।
ঐ সময়ে যুক্তরাজ্যেও দেখা দিতে লাগল UFO। ইংল্যান্ডের ঘটনাটা একটু অন্যরকম। কি যেন , শস্য ক্ষেতের শস্য মাড়িয়ে নষ্ট করত আর সেখানে অত্যন্ত জটিল, তীক্ষ্ণ Crop Circle অর্থাৎ অদ্ভুত ধরনের নকশা পাওয়া যেত। মানুষের পক্ষে একরাতে এত সুন্দর ডিজাইন সম্পূর্ণভাবে অসম্ভব। তাহলে কে করছে এই কাজ? ভিনগ্রহীরা? হয়তবা।
ক্রপ সার্কেল এর একটি উদাহরণ
১৯৯৪ সালে কিছু লোক স্টোনহেঞ্জ(!!) ভ্রমণ করতে আকাশে (উপরে) উঠেন। ৪৫ মিনিট পর আবারও স্টোনহেঞ্জ দেখতে এসে হতভম্ব হলেন। তারা দেখল ১০০ মি. দৈর্ঘ্যের একটি জটিল Crop Circle। ৪৫ মিনিটে ক্রপ সার্কেল?!! কিভাবে সম্ভব?! সবাই শুধু এটাই ভাবছিলেন । ন্যাশনাল জিওগ্রাফির প্ল্যান ক্যামেরা খানিকটা তথ্য পেয়েছিল ক্রপ সার্কেল সম্পর্কে। ক্যামেরা ফুটেজে একটা অজানা আলো দেখা যাচ্ছিল , যাকে ফলো করতে গিয়ে দেখা যায়, অজানা আলো যে ক্ষেতের উপর দিয়ে যায় সে ক্ষেতের শস্য কাত হয়ে যাচ্ছে আর তৈরি হচ্ছে Crop Circle। কত অদ্ভুত, তাইনা?
ইরানে একটা ঘটনা ঘটেছিল UFO নিয়ে যা বেশ মজার তবে অদ্ভুত রহস্যময়। ইরানের আকাশে পিরিচ আকৃতির মহাকাশ যান দেখা গিয়েছিল যাকে নামানোর জন্য ইরানি সেনারা বেতার বার্তা পাঠায়, কিন্তু সেটা ফিরে আসে। পরে তারা ভয়ংকর যুদ্ধবিমান “ফ্যান্টম” উড়ায় যেন মহাকাশযানটিকে ধরতে পারে। তারা বোমা নিক্ষেপণের চেষ্টা করে, কিন্তু তখন বোমা নিক্ষেপের সুইচ কাজই করছিলনা। UFO অর্থাৎ মহাকাশযান টি দূরে চলে যাবার পর আবার ঠিকই কাজ করেছিল সুইচ। কেন এমনটা হয়েছিল? উত্তরটা অজানা এখনো।
১৯৬০ সালের আরেকটি ঘটনায় দেখা যায়, আমেরিকার নিউ হ্যাম্পশায়ারের নির্জন পথ ধরে হাঁটছিল নরম্যান নামক এক যুবক। চলতি পথে খোলা একটি মাঠে মাটির উপরে ২৫ মিটার ব্যাসের বিরাট একটি অদ্ভুত স্পেসশিপ দেখতে পেল যা মাটির সামান্য উপর ধেয়ে এগিয়ে আসছে। এর চারপাশে ছিল উজ্জ্বল আলোর মেলা। নরম্যান সব লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছিল তখন। হঠাৎ স্পেসশিপটা কয়েকটা চক্কর দিয়ে অদৃশ্য হয়ে গেল।
তদন্ত ও গবেষণা :
এ নিয়ে আজ পর্যন্ত অনেক গবেষণা হয়েছে। যার মধ্য তিনটি গ্রহণযোগ্য তথ্য হল ,
১. ইউএফও (UFO) আসলে ষড়যন্ত্র বা কন্সপেরিসি। মার্কিন কিংবা রাশিয়ার তৈরি সুপারসনিক/ হাইপারসনিক বিমান।
২. এটা বহির্জাগতিক বুদ্ধিমান প্রাণীদের দ্বারা তৈরিকৃত ও পরিচালিত যা নিঃশব্দে চলতে পারে।
৩. এটি একটি ইলুউশন (ভ্রম)। অনেক সময় উঁচু দিয়ে উড়ে যাওয়া জেট প্লেনের গায়ে ঠিকরে পড়া সূর্যের আলো কিংবা বাতাসে তাপমাত্রার জটিল পরিবর্তনে ঘটে যাওয়া কিছু যা ইউএফও নামে চিহ্নিত করা হয়।
তবে…?? ১৯৬০ সালে কি নেমেছিল নরম্যানের সামনে? Crop Circle কাহিনীই বা কি?
মানুষ একদিন বের করবে এর উত্তর।
Source :
1. Crop Circle Research Report By -Nicole Fitzgerald
2. UFOlogist Professor Dr. Josef Allen Hynek
মার্চ-এপ্রিল।বর্ষ ৩।সংখ্যা ৬
No Comment