।প্রকৌশলী সাব্বির আহমেদ।
তোমরা তো নিশ্চয়ই জানো, ১২ মার্চ (২০১৮ সাল) বাংলাদেশের জন্য একটি দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ঘটে গেল। ইউএস বাংলার একটি বিমান বাংলাদেশ থেকে নেপালে যাওয়ার পথে দুর্ঘটনার শিকার হয়। এতে প্রায় ৫০ জন মানুষের প্রাণহানি হয়।
যখনই কোন বিমান দুর্ঘটনা ঘটে, তখনই ব্ল্যাকবক্স নামে একটি শব্দ শুনতে পাই। তোমরা নিশ্চয়ই এটিও শুনতে পেয়েছ এই ব্ল্যাকবক্সের মাধ্যমেই উদ্ধার করা হয় কীভাবে দুর্ঘটনা হয়েছিল, কেন হয়েছিল। তো বন্ধুরা চল, এবারে আমরা ব্ল্যাক বক্স সম্পর্কে আলোচনা করবো।
দুর্ঘটনা তো কেউ চায় না। কিন্তু আমরা না চাইলেও এরকম দুর্ঘটনা ঘটে যায় অহরহই। হাজার হাজার ফুট উপরে অনেক কারণ থাকতে পারে দুর্ঘটনা ঘটার। বিমান দুর্ঘটনায় যেটা হয়, সাধারণত সবাইকে মৃত্যুবরণ করতে হয়। অনেক ক্ষেত্রেই দুর্ঘটনার কারণ জানার জন্য আর কেউ অবশিষ্ট থাকে না।
কী কারণে হলো এরকম ঘটনা সেটা জানা খুব জরুরি এইজন্যই যাতে সেই ঘটনাগুলোকে বিশ্লেষণ করে পরের দুর্ঘটনাগুলো রোধ করা যায়। কিন্তু কিভাবে সম্ভব অত ওপরে, ঐরকম ভয়ংকর সময় কেন এরকম হলো সেটার খোঁজ নেয়া? ঠিক এই কাজটাই করে ব্ল্যাক বক্স।
ব্ল্যাক বক্স কি?
প্রথমেই তোমরা জেনে রাখো মজার একটি তথ্য। ব্ল্যাক বক্স এর রং আদৌ কালো নয় বরং এর রং উজ্জ্বল কমলা। এই ঝকঝকে রঙের ভীষণ মজবুত এবং অসীম সহনশীল পদার্থের তৈরি এই বাক্সটা আসলে দুই ধরনের ডেটা রেকর্ডার এর সমন্বয়ে তৈরি একটি যন্ত্র।
বিমান চলার সময় এর বিভিন্ন তথ্য, বিমানের কর্মীদের সাথে এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল এর কথাবার্তা এটি নিজের ভেতরের রেকর্ডিং সিস্টেমে জমা করতে থাকে। দুইটি রেকর্ডারের একটি হলো ফ্লাইট ডেটা ডিরেক্টর (FDR)। যেটি বিমানের মধ্যের ও সংলগ্ন পরিবেশের বিভিন্ন রকমের শব্দ, চাপ বা তাপের পরিবর্তনের হিসাব এবং আরো অনেক রকমের ফ্লাইট সংশ্লিষ্ট তথ্য রেকর্ড করে।
আরেকটি হলো ককপিট ভয়েস রেকর্ডার (CVR)। যেটি ককপিটের ভেতরে পাইলটদের নিজেদের মধ্যের কথাবার্তা, পাইলটদের সাথে বিমানের অন্য ক্রুদের কথা, ককপিট এর সাথে বিভিন্ন এয়ারপোর্ট এর রেডিও কমিউনিকেশন রেকর্ড করতে থাকে। অনেক সময় এই FDR আর CVR একসাথে না রেখে সামান্য দূরত্বে বসানো থাকে।
চিত্র-১: ব্ল্যাক বক্সের গঠন
দুর্ঘটনা ঘটে যাবার পর আহত মানুষদের বাঁচানো ছাড়াও উদ্ধারকারী দলের অন্য গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য থাকে এই বাক্সটাকে খুঁজে বের করে উদ্ধার করা। ব্ল্যাক বক্সের উজ্জ্বল কমলা রং এই সময় বাক্সটিকে খুঁজে পেতে সাহায্য করে। আপদকালীন পরিবেশের সাথে খাপছাড়া ঐ রঙ খুব সহজেই চোখে পড়ে।
উদ্ধার করার পর এটি পাঠানো হয় বিশেষজ্ঞ দলের কাছে। তারা ব্ল্যাক বক্সের তথ্য বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্তে আসার চেষ্টা করেন যে, দুর্ঘটনার আসল কারণটা কী?
ব্ল্যাক বক্সের ইতিহাস
তোমরা তো জানই রাইট ভ্রাতৃদ্বয় উড়োজাহাজ আবিষ্কার করেছিল। রাইট ভাইরা শুধু উড়োজাহাজ আবিষ্কার করেছিলেন তা কিন্তু নয়, তারাই প্রথম উড়োজাহাজের মধ্যে একধরনের রেকর্ডিং ডিভাইস বসান যেটা প্রপেলার এর রোটেশন রেকর্ড করত। তাই তারা বিমানে কোনো ধরনের রেকর্ডিং ডিভাইস ব্যবহার করারও পথপ্রদর্শক। কিন্তু ব্যাপকভাবে এই ধরনের রেকর্ডিং ডিভাইস এর ব্যবহার শুরু হয় ২য় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে।
চিত্র-২: রাইট ভাইয়েরা
৬০ এর দশক থেকে ব্ল্যাক বক্স-এ তথ্য ধরে রাখার জন্য ম্যাগনেটিক টেপ ব্যবহার করা হত, যা এখনো বহুলভাবে ব্যবহার হয়। কিন্তু আধুনিক প্রযুক্তি হলো সলিড স্টেট মেমরি বোর্ড টেকনোলোজি। এখন আর ম্যাগনেটিক টেপওয়ালা ব্ল্যাক বক্স ব্যবহার করা হয় না।
ম্যাগনেটিক টেপ ব্ল্যাক বক্স
আমাদের ছোটবেলায় দেখা, অধুনালুপ্ত টেপ রেকর্ডার এর মতই ম্যাগনেটিক টেপ কাজ করে। দুপাশে ছোট ছোট দুটো পুলির মত বসানো থাকে। আর একটি ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক হেড এর ওপর দিয়ে রেকর্ডিং ফিতা এক পুলি থেকে আরেক পুলিতে জড়াতে থাকে| সেই ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক হেড তখন ফিতার ওপর তথ্য গেঁথে দিতে থাকে।
সলিড স্টেট মেমরি বোর্ড ব্ল্যাক বক্স
আসো এবার দেখে নেই যে সলিড স্টেট মেমরি বোর্ড টেকনোলোজি কিভাবে কাজ করে, যা কিনা ম্যাগনেটিক টেপ এর থেকে অনেক বেশি নির্ভরযোগ্য। ম্যাগনেটিক টেপ এর ফিতা বা টেপ সব সময়ই নড়তে চড়তে থাকে অর্থাৎ এক পুলি থেকে অন্য পুলিতে সরতে থাকে। যার ফলে, দুর্ঘটনার সময় এটি ছিঁড়ে বা সরে যাবার সম্ভাবনা থাকে।
সলিড স্টেট মেমরি বোর্ড পদ্ধতি এই ঝামেলা মুক্ত। এতে অনেকগুলো মেমরি চিপ পরপর বিশেষ বিন্যাসে সাজানো থাকে। মেমরি চিপ ব্যবহার করার ফলে এর মধ্যে চলনশীল কিছু থাকে না। ফলে কিছু খুলে পড়া বা সরে পড়া বা ছিঁড়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে না।
মেমরি চিপ গুলোর stack রাখা থাকে রেকর্ডার এর ভেতরের Crash survival memory unit (CSMU) নামের একটি সিলিন্ডার আকৃতির কম্পার্টমেন্ট এর মধ্যে। FDR এবং CVR এর সংগৃহীত তথ্য এই মেমরি চিপ গুলোতে এসে জমা হতে থাকে। এই মেমরি বোর্ড CVR থেকে প্রাপ্ত সর্বোচ্চ ২ ঘণ্টার অডিও ডেটা এবং FDR থেকে প্রাপ্ত সর্বোচ্চ ২৫ ঘণ্টার ফ্লাইট ডেটা ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন।
FDR
এর তথ্য যোগানোর জন্য বিমানের বিভিন্ন জায়গাতে অনেক রকমের সেন্সর লাগানো থাকে। এই সেন্সরগুলো বিমানের ত্বরণ, গতিবেগ, বাইরের তাপ-চাপ, ভেতরের তাপ-চাপ, বিমানের উচ্চতা, ফ্ল্যাপ সেটিং ইত্যাদি বহুরকমের প্যারামিটার মাপতে থাকে এবং রেকর্ডারে পাঠাতে থাকে।
যেখানে ম্যাগনেটিক টেপ রেকর্ডার মাত্র ১০০ রকমের প্যারামিটার মাপতে পারে, সেখানে সলিড স্টেট রেকর্ডার বিমানের আকারের ওপর নির্ভর করে এইরকম ৭০০’র বেশি পর্যন্ত প্যারামিটার মাপতে পারে।
সেন্সরগুলো থেকে প্রাপ্ত তথ্যগুলো প্রথমে সব চলে যায় flight data acquisition unit (FDAU) এ, যেটি বিমানের সামনের দিকে রাখা থাকে। তারপর FDAU এই তথ্যগুলো ব্ল্যাকবক্সে পাঠিয়ে দেয়। তাই FDAU কে বলা হয় মিডল ম্যানেজার।
FDR যেসব ধরনের প্যারামিটার রেকর্ড করে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো; টাইম, প্রেসার, এয়ারস্পিড, ভার্টিকেল এক্সিরালেশন, ম্যাগনেটিক হেডিং, কন্ট্রোল কলাম পজিশন, রাডার প্যাডেল পজিশন, কন্ট্রোল হুইল পজিশন, ফুয়েল ফ্লো ইত্যাদি।
ব্ল্যাক বক্সের টেকনোলজির ওপর নির্ভর করে এইরকম ৭০০’র বেশি প্যারামিটার মাপা যায়। যত বেশি প্যারামিটার মাপা যাবে, বিশেষজ্ঞদের দুর্ঘটনার কারণ সনাক্ত করতে তত বেশি সুবিধা হবে।
চিত্র-৩: এফডিআর ও সিভিআর
CVR
এর তথ্য পাওয়ার জন্য পাইলট এর হেডসেট, কো-পাইলট এর হেডসেট, থার্ড ক্রু মেম্বার, ককপিট এর ঠিক মাঝামাঝি এই জায়গাগুলোতে মাইক্রোফোন রাখা থাকে। পাইলটদের নিজেদের মধ্যে কথা, পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন আওয়াজ যেমন কোনো সুইচ টেপার বা কোনো ধাক্কা এইগুলো মাইক্রোফোন ঠিক ঠিক ধরে নেয়।
মাইক্রোফোন এগুলো রিসিভ করে পাঠায় এসোসিয়েটেড কন্ট্রোল ইউনিট নামের একটি ইন্টারমিডিয়েট ডিভাইসে। এই ডিভাইসটি ওই শব্দগুলোকে প্রি-এম্পলিফিকেশন করে তারপর CVR-এ পাঠায়।
এখানে তোমাদের প্রশ্ন জাগতে পারে যে, যদি CVR ৩০ মিনিট থেকে ২ ঘণ্টার শব্দ রেকর্ডের ক্ষমতাসম্পন্ন হয় (টেকনোলজির উপর নির্ভর করে) তাহলে লম্বা ফ্লাইটের সময় এরা কিভাবে এত সময়ের শব্দের হিসাব রাখে? আসলে এরা শেষের দিকের সময়ের হিসাব রাখে। উদাহরণস্বরূপ, ম্যাগনেটিক CVR এর ম্যাগনেটিক টেপ প্রতি ৩০ মিনিটে একটি লুপ ঘোরে।
অর্থাৎ, টেপের একই অংশ ৩০ মিনিট পর পর ঘুরে ঘুরে আসে। আগের ৩০ মিনিটে রেকর্ড করা শব্দ পরের ৩০ মিনিটের শব্দের দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়ে যেতে থাকে। তাই এরকম কোনো ব্যাপার নেই যে ঘণ্টার পর ঘণ্টার উড়ানে হাজার হাজার গজ টেপ লাগে। এই ক্ষেত্রে ঠিক একইভাবে কাজ করে solid state technology-ও। ব্ল্যাকবক্সের কাজ হলো দুর্ঘটনা ঘটার পর। তাই দুর্ঘটনার কারণ উদ্ঘাটনের জন্য শেষ আধাঘণ্টার তথ্যই যথেষ্ট।
পাওয়ার সোর্স
যেকোন যন্ত্র রান করার জন্য অবশ্যই পাওয়ার বা বিদ্যুতের প্রয়োজন হয়। তেমনি ব্ল্যাক বক্সের পাওয়ারের যোগান দেয় ২ টি জেনারেটর। একটি জেনারেটর থাকে ২৮ ভোল্টের DC সোর্স। আরেকটা থাকে ১১৫ ভোল্টের AC সোর্স।
CSMU
বেশিরভাগ বিমান দুর্ঘটনায়, ওইরকম ভয়াবহ ধ্বংসলীলার ধাক্কা সামলে শেষ পর্যন্ত FDR বা CVR এর অন্তস্থলে রাখা crash survival memory unit (CSMU) টিকে থাকে, যার ভেতরে রক্ষিত থাকে মেমরি চিপ বা ম্যাগনেটিক টেপ। রেকর্ডার এর বাদবাকি অংশ ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে ধংস হয়ে যায়।
চোঙ্গাকৃতির CSMU রেকর্ডার এর চ্যাপ্টা তলের সাথে দৃঢ়ভাবে আবদ্ধ থাকে। কারিগরি উত্কর্ষতার চূড়ান্ত নিদর্শন এই CSMU গুলো প্রচন্ড উত্তাপ, তুমুল চুরমার কিংবা টন টন চাপের মধ্যেও টিকে থাকার মত করে তৈরি করা থাকে।
সলিড স্টেট টেকনোলজির ব্ল্যাক বক্সগুলোর CSMU তৈরি হয় ৩ টা layer-এর মাধ্যমে। ভেতর থেকে বাইরের দিকে আসতে থাকলে পর পর যে লেয়ার গুলো পাব:-
Aluminum Housing – এটি CSMU এর একদম ভেতরের দিকের প্রথম লেয়ার। এটি মেমরি চিপ স্ট্যাক এর চারপাশে ঘেরা অ্যালুমিনিয়ামের পাতলা পর্দা।
High Temperature Insulation – ১ ইঞ্চি পুরু dry silica-এর এই আস্তরণ, বিমান দুর্ঘটনার পরের আগুনের হাত থেকে CSMU-কে রক্ষা করে ।
Stainless Steel Shell – ভেতরের ওই দুটো আস্তরণকে ঢেকে রাখে বাইরের এই stainless steel এর খোলক। এর পুরুত্ব ০.২৫ ইঞ্চি হয়। অনেক সময় স্টিল এর বদলে টাইটেনিয়ামও ব্যবহার করা হয়।
ব্ল্যাক বক্স এর নাম “ব্ল্যাক” বক্স কেন?
তোমাদের আগেই বলেছি ব্ল্যাক বক্স এর রং উজ্জল কমলা। তা সত্ত্বেও একে “ব্ল্যাক” বক্স কেন বলে সেটা নিয়ে কয়েকটি মত আছে। আগে এই রেকর্ডারগুলোর রং হত কালো; তাই অনেকে বলেন যে, এ থেকেই এই নামের উৎপত্তি। আবার কেউ কেউ বলেন, দুর্ঘটনার পর আগুনে পুড়ে এর রং কালো হয়ে যায় বলেই এরকম নামে একে ডাকা হয়।
অনেকে আবার বলেন, দুর্ঘটনা, মৃত্যু এসব খারাপ ব্যাপারকে মাথায় রেখেই এরকম নাম দেয়া হয়েছে। নামের কারণ যাই হোক না কেন, এর কাজ হল শেষ মুহূর্তগুলোকে ধরে রাখা। আর এই শেষ মুহুর্তগুলোর তথ্য উদ্ধারের জন্য একে খুঁজে পাওয়া খুব জরুরি।
দুর্ঘটনার পর
ব্ল্যাক বক্স খুঁজে পাওয়া নিশ্চিত করার জন্য একে টকটকে কমলা রঙ্গে রঞ্জিত করার পাশাপাশি আরো কিছু কারিগরি ব্যাপারও রাখা হয়| যানবাহনের গায়ে বা হাইওয়ের পাশে রোড সাইনগুলোতে যেমন refelctive material লাগানো থাকে, সেরকম টেপ ব্ল্যাক বক্স এর গায়ে লাগানো থাকে।
আন্ডারওয়াটার লোকেটর বিকন
L3 communications লেখা সাদা রঙের সিলিন্ডার আকৃতির জিনিসটাই হলো underwater locator beacon। পানির সংস্পর্শে এলেই এর মধ্যে থাকা সেন্সর underwater locator beacon-কে চালু করে দেয়। যেই মূহুর্তে এটি চালু হয়, তারপর থেকে underwater locator beacon প্রতি সেকেন্ডে একবার করে আগামী ৩০ দিন পর্যন্ত ultrasonic শব্দের ঢেউ ছাড়তে শুরু করে।
এমনকি ১৪,০০০ ফুট পানির নিচে থেকেও এটি কাজ করতে সক্ষম। এর থেকে নির্গত শব্দ মানুষের কানে ধরা পড়েনা ঠিকই, কিন্তু sonar বা acoustical locating যন্ত্রের দ্বারা এই শব্দ সনাক্ত করা যায়।
ব্ল্যাক বক্স খুঁজে পাওয়ার পর চেষ্টা করা হয় যাতে আর কোনোভাবেই এর রেকর্ডিং ডিভাইসগুলোর ক্ষতি না হয়। যেমনভাবে পাওয়া যায়, চেষ্টা করা হয় ঠিক সেইভাবেই যেন এটিকে পরিক্ষাগারে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়।
সেই কারণে, ব্ল্যাক বক্স পানি থেকে উদ্ধার করা হলে একে পানিভর্তি কন্টেইনারে চুবিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়, যাতে একে যে পরিবেশে পাওয়া গেছে তা অক্ষুণ্ন থাকে। পরীক্ষাগারে গেলে পরে বিশেষজ্ঞরা অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
চিত্র-৪: আন্ডারওয়াটার লোকেটর বিকন
তথ্য পুনরুদ্ধার
সবশেষ ব্যাপার হলো ব্ল্যাকবক্স থেকে তথ্য পুনরুদ্ধার। ল্যাবে নিয়ে যাওয়ার পর থেকেই শুরু হয় FDR আর CVR থেকে তথ্য উদ্ধারের প্রক্রিয়া। দুটো থেকেই তথ্য উদ্ধার করা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। আধুনিক প্রযুক্তির যন্ত্র ও সফটওয়্যার ব্যবহার করেও এর তথ্য উদ্ধারে কখনো কখনো সপ্তাহ, এমনকি মাস লেগে যায় ।
FDR যদি ঠিকঠাক থাকে তো এর মেমরি বোর্ড থেকে তথ্য উদ্ধার সামান্য সময়ের ব্যাপার। কিন্তু খুব সঙ্গত কারণেই, বেশিরভাগ সময়েই একে ভাঙ্গা অবস্থাতে পাওয়া যায়। তখন একে খুলে ফেলে ভেতর থেকে মেমরি বোর্ডগুলো বের করে নিয়ে, নতুন মেমরি ইন্টারফেস ক্যাবল লাগিয়ে নতুন FDR এর সাথে সংযুক্ত করা হয়।
এই নতুন FDR এর ভেতর এমন সফটওয়্যার থাকে যেটা তথ্য উদ্ধারের পাশাপাশি এটিও খেয়াল রাখে, আগের তথ্য যেন ওভাররাইট না হয়ে যায়। সবচেয়ে ঝামেলার কাজ হলো CVR এর তথ্য উদ্ধার করা। এই কাজের জন্য রীতিমত একটি বিশেষজ্ঞ দল তৈরি করতে হয়।
এই দলে থাকে এয়ারলাইন থেকে একজন প্রতিনিধি, বিমান প্রস্তুতকারী সংস্থার লোক, পরিবহন-নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ, ফ্লাইট-নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তা। এছাড়াও থাকতে পারে ভাষা-বিশেষজ্ঞ এবং খুব প্রয়োজন হলে দোভাষীও। এরা সবাই মিলেই ব্ল্যাক বক্স থেকে তথ্য উদ্ধারের অসীম ধৈর্যের এই সময়সাপেক্ষ কাজটি সম্পন্ন করেন।
বিমান দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানের জন্য প্রয়োজনীয় এই যন্ত্রটি তাই দিনে দিনে আরো উন্নত হয়ে উঠছে এবং আকাশে উড়ার নিরাপত্তাকে করে তুলছে আরো নিখুঁত।
মে-জুন ২০১৮। বর্ষ ৪। সংখ্যা ১
No Comment