।সোহান আব্দুল্লাহ।
সাম্প্রতিক সময়ের বেশ আলোচিত একটি প্রযুক্তির নাম ইভিএম। এর পূর্ণরূপ- “ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন”। পূর্ণাঙ্গ নামটি শুনলেই এই প্রযুক্তিটির উদ্দেশ্য ও কার্যকারিতা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। ইভিএম হলো নির্বাচনে ভোটারদের ভোটগ্রহণের এমন একটি প্রযুক্তি (ই-ভোটিং প্রযুক্তি) যা মূলত ইলেকট্রিক্যাল, ইলেকট্রোমেকানিক্যাল আর ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশের সমন্বয়ে তৈরি।
ইভিএম ব্যবহারের সুবিধা কী ?
দৈনিক পত্রিকার প্রতিবেদন অনুসারে একটি ইভিএম মেশিনে প্রায় চার হাজারটি পর্যন্ত ভোট দেয়া যায়। সর্বোচ্চ ৬৪ জন প্রার্থীর তালিকা থাকে। বাটন চাপ দিয়ে অক্ষরজ্ঞানহীন ব্যক্তি পর্যন্ত অনায়াসেই ভোট দিতে পারবেন। তবে এক্ষেত্রে গণমাধ্যমে প্রশিক্ষণমূলক ভিডিও ভোটারদের জন্যে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। একটি ভোট দিতে আনুমানিক ১৪ সেকেন্ড সময় লাগে ।
ইভিএম ব্যবহারে কয়টি ধাপ বা ইউনিট থাকে ?
এটি কয়েকটি ইউনিটে ভাগ করা থাকে। ইউনিটগুলো নিম্নরূপ-
১. ব্যালট ইউনিট : ব্যালট ইউনিটটি থাকে বুথের ভেতর। এর মাধ্যমে ভোটার তার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেন।
২. কন্ট্রোল ইউনিট : কন্ট্রোল ইউনিট থাকে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারের সামনের টেবিলে।
৩. ডিসপ্লে ইউনিট : ইভিএমের সঙ্গে একটি বড় ডিসপ্লে ইউনিট রাখা হয়েছে, যা এমন স্থানে রাখা হয় যাতে বুথের ভেতর ভোট-সংশ্লিষ্ট সবার দৃষ্টিগোচর হয়।
৪. ব্যাটারি ইউনিট : এই মেশিন চালাতে দরকার হয় ১২ ভোল্টের একটি ব্যাটারি। ব্যাটারিতে মেশিনটি সারাদিন চলতে পারে ফলে বাড়তি কোন বিদ্যুতের প্রয়োজন হয় না।
৫. স্মার্ট কার্ড ও মাস্টার কার্ড : একটি ভোটিং মেশিন পরিচালনা করার জন্য সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারকে একটি করে স্মার্ট কার্ড-ভিত্তিক আইডি কার্ড দেওয়া হয়, যে কার্ডটি ছাড়া কন্ট্রোল ইউনিট পরিচালনা করা সম্ভব হয় না। ইউনিটগুলো ভিন্ন ভিন্ন অবস্থানে থাকলেও তারের মাধ্যমে পরস্পরের সাথে যুক্ত থাকে।
সব তো বুঝলাম, কিন্তু ইভিএম তৈরি হয় কীভাবে?
ইভিএম যে সার্কিট দিয়ে তৈরি হয় সেই সার্কিটে একটা ‘সক্রিয়করণ চাবি’ (Activation Key) থাকে, যেটা দিয়ে ইভিএম এর কার্যকারিতা শুরু হয়। আর পুরো কার্যক্রমটা এলসিডি মনিটরে ডিসপ্লে করা হয়।
গোটা সার্কিটটি তিনটি অংশে বিভক্ত :
১. পাওয়ার সাপ্লাই সেকশন
২. মাইক্রোকন্ট্রোলার সেকশন
৩. এলসিডি ডিসপ্লে সেকশন
এর মধ্যে পাওয়ার সাপ্লাই সেকশনে থাকা ব্রিজ রেক্টিফায়ার এসি বিদ্যুৎ প্রবাহকে ডিসি বিদ্যুৎ প্রবাহে রূপান্তরিত করে আর সাথে থাকা আইসি চিপটি (যেটা ভোল্টেজ রেগুলেটর হিসেবে কাজ করে) সার্কিটে আগত ভোল্টেজকে ‘স্মুথ ভোল্টেজ’-এ রূপান্তর করে (অর্থাৎ, ধারকত্ব বৃদ্ধি করে)
সবশেষে এটুকুই বলতে চাই , ইভিএম ব্যবহারের ফলে কোটি কোটি সংখ্যক ব্যালট ছাপানোর খরচ, কাগজের খরচ, এগুলো পরিবহনের খরচ, ভোট গণনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট লোকবলের খরচ সবই সাশ্রয় হবে। তবে এই প্রযুক্তির নিরাপদ ব্যবহার নিয়েও কিছুটা সংশয় থেকে যায়। তাই আমাদের উচিত সচেতন নাগরিক হিসেবে ইভিএম-এর নিরাপদ ব্যবহার সম্পর্কে জেনে এর আশীর্বাদটুকু গ্রহণ করা।
জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি ২০১৯। বর্ষ ৪। সংখ্যা ৫
No Comment