।ব্যাপন ডেস্ক।
প্রশ্নঃ আঙুল ফোটালে শব্দ হয় কেন?
(আবু জাফর, শ্রেণি: ৯ম, নারায়ণপুর ডিএস ফাযিল মাদ্রাসা, বি-বাড়িয়া)
উত্তরঃ হাতের আঙ্গুলে অনেকগুলো অস্থিসন্ধি আছে। হাত মুঠো করতে গেলেই ব্যাপারটি চোখে পড়ে। যে অস্থিসন্ধিগুলো খুব সহজে ফোটানো যায় তাদের নাম ডায়রোথ্রোডিয়াল জয়েন্ট। এরা সবচেয়ে আদর্শ অস্থিসন্ধি। এদের মধ্যে দুটি হাড় থাকে, যারা একে অপরের তরুণাস্থির পৃষ্ঠে মিলিত হয়।
তরুণাস্থির পৃষ্ঠ একটি সমন্বিত ক্যাপসুল দিয়ে ঢাকা থাকে। অস্থিসন্ধির এই তরুণাস্থির অভ্যন্তরে রয়েছে একটি লুব্রিকেন্ট। নাম সাইনোভিয়াল ফ্লুইড। এর মাধ্যমেই আবার যৌথ তরুণাস্থিতে পুষ্টি পৌঁছে। এই ফ্লুইডে আরও আছে অক্সিজেন, নাইট্রোজেন ও কার্বন-ডাই-অক্সাইডসহ কিছু গ্যাস।
মনে করা হয়, শব্দের কারণ মূলত দ্রবণ থেকে গ্যাসের দ্রুত বেরিয়ে আসা। এর ফলে তরুণাস্থির ক্যাপসুল প্রসারিত হয়। আঙ্গুল ফোটানোর পরপর এক্স-রে ছবি তুললে অস্থিসন্ধির ভেতরে গ্যাসের বুদবুদ দেখা যাবে। গ্যাসের প্রসারণের ফলে অস্থিসন্ধির আয়তন ১৫ থেকে ২০ গুণ বেড়ে যায়।
গ্যাস আবার দ্রবণে ফিরে না যাওয়া পর্যন্ত নতুন করে আবার আঙ্গুল ফোটানো যায় না।
প্রশ্নঃ মাইনাস × মাইনাস = প্লাস হয় কেন ??
(নাম: এম এন জামান রনি, শ্রেণি: দশম, বীরগন্জ পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, বীরগন্জ , দিনাজপুর)
উত্তরঃ এটাকে অনেকভাবে ব্যাখ্যা করা যায়। প্রথমে একটু রূপকভাবে চিন্তা করি। মনে করো প্লাস মানে বন্ধু, আর মাইনাস মানে শত্রু। তাহলে প্লাসকে প্লাস দিয়ে গুণ মানে বন্ধুর বন্ধু। বন্ধুর বন্ধু নিজেরও বন্ধু হবে। তাই প্লাস আর প্লাসে প্লাস। প্লাসকে মাইনাস দিয়ে গুণ মানে বন্ধুর শত্রু।
মানে নিজেরও শত্রু। তার মানে মাইনাস। একইভাবে মাইনাস আর প্লাস মানে শত্রুর বন্ধু, যার মানে নিজের শত্রু বা মাইনাস। এবার মাইনাস মাইনাস মানে শত্রুর শত্রু। শত্রুর শত্রু এক অর্থে নিজের বন্ধু, তাই না?
এবার আরেকটু সিরিয়াসভাবে দেখি। মনে করো প্লাস মানে আমরা সামনের দিকে যাচ্ছি। আর মাইনাস মানে পেছনের দিকে ঘুরে যাচ্ছি। তাহলে দুইবার মাইনাস মানে দুইবার পেছনে ঘুরে গেলাম। যেমন ধরো তুমি উত্তর দিকে যাচ্ছো। একবার উল্টো ঘুরলে তুমি যাবে দক্ষিণ দিকে। আবার ঘুরলে আগের মতো উত্তর হয়ে যাবে।
তার মানে দুইবার মাইনাস করা মানে আগের মতো হয়ে যাওয়া। আসলে মাইনাস দিয়ে গুণ করা মানে ১৮০ ডিগ্রি ঘুরিয়ে দেওয়া। রাস্তায় গাড়ির ইউটার্ন নেওয়ার মতো আর কি। তাহলে, দুইবার ইউটার্ন নেওয়া মানে আবার আগের দিকে যাওয়া, তাই না?
এবার আমরা সংখ্যারেখা দিয়ে দেখি। মনে করো, আমরা ১ বিন্দুতে আছি। এবার ১ কে ২ দিয়ে গুণ করলে আমরা ২-এ চলে এলাম। আবার ২ কে ৩ দিয়ে গুণ করলে ৬ –এ চলে এলাম।
যেহেতু মাইনাস (-) দিয়ে গুণ করা মানে ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে যাওয়া। তাই ২ কে -২ দিয়ে গুণ করলে তাই আমরা পাব -৪। মানে ঘুরে সংখ্যারেখার পেছন দিকে চলে এলাম। এবার -৪ কে আবার -২ দিয়ে গুণ করা মানে আবার ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে ০-এর ডানে চলে যাওয়া। তার মানে +৮।
প্রশ্নঃ সূর্যের আলো আমাদের চোখে সরাসরি পড়লে আমরা দেখতে পাই না কেন?
(সাদমান শাকুর)
উত্তরঃ প্রথম কথা হলো কখনোই সরাসরি সূর্যের দিকে তাকাবে না। অল্প সময়ের জন্যে না। এমনকি সূর্যগ্রহণের সময়েও না। এক্ষেত্রে বিশেষ ধরনের এক্লিপ্স (eclipse) গ্লাস ব্যবহার করতে হয়। সূর্যের দিকে তাকানোর ফলে সাময়িক বা স্থায়ী অন্ধত্ব দেখা দিতে পারে। অতএব, সাবধান!
এখন, প্রশ্ন হলো সূর্যের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই না কেন? সূর্য প্লাজমা পদার্থে গড়া অতি উত্তপ্ত এক নক্ষত্র। এই রিসেপ্টরগুলো খুব আলোকসংবেদী। এদের মাধ্যমেই বিভিন্ন রং, রং এর পার্থক্য, আলো ও ছায়ার তারতম্য চোখ বুঝতে পারে। এরাই চোখে দেখা দৃশ্য পাঠিয়ে দেয় মস্তিষ্কে।
সূর্যের দিকে তাকালে এই রিসেপ্টরগুলো অতিমাত্রায় উত্তেজিত হয়ে পড়ে। ব্যাপারটা অনেকটা উচ্চশব্দ শোনার পর কানের অবস্থার সাথে তুলনীয়। সূর্যের দিকে অধিক সময় তাকিয়ে থাকলে এই রিসেপ্টরগুলো বিকল হয়ে যেতে পারে।
সূর্য প্রধানত তিন রকম রশ্মি নির্গত করে। দৃশ্যমান আলো, অবলহিত আলো ও অতিবেগুনি (ultraviolet) রশ্মি। এর মধ্যে অতিবেগুনিই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর। এর মাধ্যমে হতে পারে মারাত্মক রকমের সানবার্ন (রোদ্রে পোড়া) । অবশ্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই ক্ষতি সাময়িক।
তবে দীর্ঘ সময় সূর্যের দিকে তাকিয়ে থাকলে স্থায়ী ও পূর্ণাঙ্গ অন্ধত্ব বরণ করতে হতে পারে।
জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি ২০১৯। বর্ষ ৪। সংখ্যা ৫
No Comment