।ডা. মো. ফজলুল কবির পাভেল।
কোলন ক্যান্সার
কোলন ক্যান্সার পরিচিত অসুখ। কোলন ক্যান্সার একটি জটিল রোগও বটে। প্রতিবছর অনেকেই এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছে এবং দুর্ভাগ্যজনকভাবে মৃত্যুবরণ করছে। সাধারণত পুরুষেরা এই রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। বয়স বাড়লে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।
সাধারণত ৪০-৫০ বছর বয়সী রোগীদের ক্ষেত্রে এই ক্যান্সার বেশি দেখা যায়। এছাড়া ৪০ বছরের নিচেও কোলন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অতিরিক্ত লাল মাংস খাওয়া, খাদ্যতালিকায় আঁশজাতীয় খাবারের অনুপস্থিতি, ধূমপান ও মদ্যপান কোলন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ায়।
চিত্র ১
প্রাথমিকভাবে কোলন ক্যান্সার নির্ণয় করা একটু কঠিন। প্রথমদিকে রোগটির তেমন কোনো উপসর্গ বোঝা যায় না। কোলন বা মলাশয়ের কোন জায়গায় ক্যান্সার রয়েছে তার ওপর ভিত্তি করে উপসর্গের বিভিন্নতা দেখা যায়। কোলন ক্যান্সার লক্ষণ হতে পারে পায়খানার সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
বয়স্ক মানুষের হঠাৎ করেই এরকম শুরু হলে কোলন ক্যান্সারের কথা মাথায় রাখতে হবে। পেটে ব্যথা থাকতে পারে। অধিকাংশ রোগী প্রথম এই সমস্যা নিয়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। মলত্যাগের অভ্যাস পরিবর্তন, ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য, রক্তশূন্যতা, দূর্বলতা, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি উপসর্গ নিয়েও রোগী আসতে পারে।
এই ক্যান্সার হলে ওজন কমে যায়। কোলন ক্যান্সার ডায়াগনোসিসের জন্য কোলন্সকোপি করে বায়োপসি করা হয়। বায়োপসির মাধ্যমে ক্যান্সার নির্ণয়ের পর সিটি স্ক্যান করে ক্যান্সারের ধাপ নির্ণয় করা হয়। রক্তে অ্যান্টিজেনের (CEA) পরিমাণ নির্ণয় করেও ক্যান্সারের অবস্থা বোঝা যায় ।
কোলন ক্যান্সারের চিকিৎসায় অপারেশন করতে হয়। অপারেশনের আগে বা পরে কেমোথেরাপি দেওয়া হয়। কারও যদি কোলনে পলিপ থাকে তবে সেখান থেকেও ক্যান্সার হতে পারে। তাই প্রথম অবস্থায়ই সতর্ক হতে হবে।
কারো যদি ইনফ্ল্যামেটরি বাওয়েল ডিজিজ যেমন : আলসারেটিভ কোলাইটিস থাকে সেখান থেকেও ক্যান্সার হতে পারে। তাই যাদের দীর্ঘদিন ধরে রক্ত পায়খানা হয় এবং পেটে ব্যথা হয় তাদের পরীক্ষা করিয়ে নিতে হবে। ধূমপান কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই অবশ্যই ধূমপান ত্যাগ করতে হবে।
যারা বেশি মদ্যপান করেন তাঁদের কোলন ক্যান্সার বেশি হয়। লাল মাংস কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায় । তাই লাল মাংস ত্যাগ করতে হবে। ফলমূল ও শাকসবজি বেশি খেতে হবে।
চিত্র-২ : কোলন ক্যান্সারের লক্ষণ
মাথাব্যাথা হলেই মাইগ্রেন নয়
মাথাব্যথা হলেই অনেকে মাইগ্রেন ভেবে নেন। এমন ধারণা আমাদের মধ্যে অনেকেরই আছে। কিন্তু সব মাথাব্যথাই মাইগ্রেন নয়। মাথাব্যাথার বিভিন্ন কারণের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মাইগ্রেন। মেয়েদের মধ্যে এ রোগ বেশি দেখা যায়। মাইগ্রেন কেন হয় তা বিজ্ঞানীরা আজও সুনির্দিষ্টভাবে জানতে পারেনি।
মাথায় রক্ত চলাচলের তারতম্যের কারণে মাইগ্রেন হয় বলে কেউ কেউ বলেন। কিছু কিছু বিষয় মাইগ্রেনের ব্যথা বাড়িয়ে দিতে পারে। যেমন চকলেট, পনির, কফি ইত্যাদি বেশি খেলে মাইগ্রেনের ব্যাথা হতে পারে। জন্মবিরতিকরণ ওষুধ, দুশ্চিন্তা করা, ভ্রমণ, তীব্র আলো, জোরালো শব্দ ইত্যাদি মাইগ্রেনের ব্যাথা শুরু করতে সহায়তা করে।
মাইগ্রেনের ব্যথা মাথার এক পাশে হয়। সাথে বমি বমি ভাব হয়। এই ব্যথা শুরু হলে কয়েক ঘণ্টা থেকে কয়েক দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। মাইগ্রেনের ব্যাথার তীব্রতা আলোতে বাড়ে। রোগী অন্ধকারে থাকতে পছন্দ করে। অনেক রোগী মাইগ্রেন ব্যথা শুরু হওয়ার আগেই বুঝতে পারে।
এসময় কিছু বিশেষ লক্ষণ দেখা দেয়। চোখের সামনে আঁকাবাঁকা রেখা দেখা দিতে পারে। ঝাপসা দেখা, কথা বলতে অসুবিধা হতে পারে। শরীরের কোনো অংশ ঝিনঝিন করা বা অবশ লাগতে পারে। টেনশন জনিত মাথাব্যাথা সবচেয়ে বেশি হয়। বেশির ভাগ মাথাব্যথাই হয় টেনশন বা অতিরিক্ত দুশ্চিন্তার কারণে।
চিত্র-৩ : মাথাব্যাথা বনাম মাইগ্রেন
মেয়েদের এই সমস্যা বেশি হয়। এছাড়া ক্লাস্টার মাথাব্যথা, সাইনুসাইটিসের ব্যাথা, ট্রাইজেমিনাল নিউরালজিয়া, দাঁতের ব্যাথা, ব্রেনের টিউমার, ব্রেনের ইনফেকশন ইত্যাদি কারণেও মাথা ব্যথা হতে পারে। সুতরাং মাথাব্যথা হলেই মাইগ্রেন ভেবে নিজে নিজে ওষুধ খাবেন না। কারণ বের করা উচিত।
বিভিন্ন কারণেই কিন্তু মাথাব্যথা হয়। তাই মাথাব্যথা হলেই মাইগ্রেন এই ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। সঠিক চিকিৎসা নিতে হবে।
ফুসফুসের ক্যান্সার প্রতিরোধ
ফুসফুসের ক্যান্সার খুব পরিচিত অসুখ। আমাদের দেশে প্রতিবছর অনেকেই এই রোগে আক্রান্ত হয় এবং অনেকেই মৃত্যুবরণ করে। সাধারণত যারা খুব বেশি ধুমপান করেন তাদের ফুসফুসের ক্যান্সার হবার সম্ভাবনা খুব বেশি।
পাশাপাশি যারা বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় জড়িত তাদের ও এই ক্যান্সার হবার সম্ভাবনা খুব বেশি। এ ছাড়া বংশগত কারণেও এমন ক্যান্সার হতে দেখা যায়। বায়ুদূষণ বেড়ে যাওয়াতে বর্তমানে ফুসফুসের ক্যান্সারও বেড়ে গেছে।
চিত্র-৪ : ফুসফুস ক্যান্সারের লক্ষণ
ফুসফুস ক্যান্সার অনেকটাই প্রতিরোধ করা যায়। প্রতিরোধের জন্য প্রথমেই ধূমপান ত্যাগ করতে হবে। ধূমপানের বিরুদ্ধে সর্বত্র ব্যাপক জনমত গড়ে তুলতে হবে। যারা ধূমপানে অভ্যস্ত তাদেরকে ধূমপানের কুফল সম্পর্কে সচেতন করতে হবে।
প্রয়োজনে ওষুধ ব্যবহার করতে হবে। তবে ধূমপান ছাড়ার জন্য সদিচ্ছা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সরাসরি ধূমপানের মতো পরোক্ষ ধূমপানও অনেক বেশি ক্ষতি করে। বাড়িতে, অফিসে বা পাবলিক প্লেসে ধূমপান অবশ্যই বন্ধ করতে হবে।
প্রকাশ্য স্থানে, বাসাবাড়িতে, অফিসে, বাসে, রাস্তাঘাটে, বাজারে যারা ধূমপান করে তাদের সবাই মিলে প্রতিরোধ করতে হবে। বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষকরা, নেতা এবং মসজিদের ইমামদের এই বিষয়ে ভূমিকা পালন করতে হবে। সিনেমা এবং নাটকে যাতে ধূমপানের দৃশ্য না থাকে সে ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। বিভিন্ন কারণে যে বায়ুদূষণ হয় তা প্রতিরোধ করতে হবে।
ফুসফুস ক্যান্সার প্রতিরোধে খাবারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। সবুজ শাকসবজি নিয়মিত খেতে হবে। ফলমূল প্রচুর পরিমাণে খেতে হবে। কাশির সাথে রক্ত বা দীর্ঘদিন কাশি বা শ্বাসকষ্ট থাকলে দ্রুত চিকিৎসক দেখাতে হবে। সচেতনতাই প্রতিরোধ করতে পারে ফুসফুসের ক্যান্সার।
চিত্র-৫
জুলাই-আগষ্ট ২০১৯। বর্ষ ৫। সংখ্যা ২
No Comment