আবিরের আগামীকাল পরীক্ষা। কিন্তু তীব্র গরমে মন বইয়ের পাতায় থাকতে চাইছে না। এমন সময় আম্মুর ডাক আসল। তরমুজ খেতে হবে! এর চেয়ে খুশির খবর এই গরমে আর কী হতে পারে। গরম থেকে নিষ্কৃতি পেতে তরমুজের যে সত্যিই জুড়ি নেই।
তরমুজ খেতে ভালো লেগে গেল। গলা সমান খেয়ে ফেলে তারপর থামল। একটু পর আম্মু রাতের খাবার খেতে ডাকলেন। ও গেল না। পেট যে ভর্তি। কিন্তু ক্ষিদে ফিরে আসতে বেশিক্ষণ সময় লাগল না। গলা পর্যন্ত তরমুজ খেয়েও ক্ষিদে মিটল না কেন? চলো তো, দেখা যাক ব্যাপারটা।
ব্যাপন সব সংখ্যা ৯৯৯!
লতাজাতীয় তরমুজ গাছে ধরে এই সুস্বাদু ফলটি। গাছের বৈজ্ঞানিক নাম Citrullus lanatus। উদ্ভিদবিজ্ঞানীরা তরমুজকে বলেন পেপো জাতীয় ফল। পেপো (Pepo) হলো এক ধরনের বিচি ফল। যার খোলস হয় শক্ত। আর ভেতরটা মাংসল।
তাহলে আর কোন ফলকে পেপো বলা যেতে পারে বলো দেখি? দুয়েকটা বলে দিলাম, যাও! একটা হলো শসা! ভাবছো, শসা! কী! শসা আবার ফল হয় কী করে? তোমার জ্ঞাতার্থে বলছি, উদ্ভিদবিজ্ঞানীরা কিন্তু শসাকে ফল হিসবেই গণ্য করেন। আরেকটা পেপোর নাম বলে দিচ্ছি। তোমার অতি পরিচিত কুমড়া। আর কী কী হতে পারে ভেবে জানাও আমাকে।
আচ্ছা তরমুজ সবজি না হয়ে ফল কেন হলো? প্রশ্নটা হাস্যকর লাগছে, তাই না? কিন্তু একটিবার ভাবো তো অন্য ফলগাছের সাথে তরমুজের মিল আছে কি? আম গাছ, জাম গাছ, লেবু গাছ? কিংবা কাঁঠাল গাছ? না মিল তো নেই। তরমুজ পাওয়া যায় বরং সবজি ক্ষেতে।
সে গাছকেও আসলে গাছের সাধারণ অর্থের ‘গাছ’ বলা যায় না। তাহলে ফল হওয়ার রহস্য কী? আসল রহস্য হলো ফলটা ক্ষেতে মিষ্টি আর রসালো। ক্ষেতে জন্মে বলে অবশ্য কিছু মানুষ ভুল করে একে সবজিও বলে ফেলে।
পণ্ডিতরা বলেন, তরমুজের প্রথম উদ্ভব ঘটে আফ্রিকায়। আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলের কালাহারি মরুভূমিতে। আবার প্রত্নতত্ত্ববিদরা দিচ্ছেন আরেক দারুণ খবর। মিশরীয়রা নাকি আজ থেকে ৫ হাজার বছর আগেও তরমুজ চাষ করতো।
চিত্র-১ : তরমুজে কী কী আছে?
তরমুজের ইংরেজি ওয়াটারমেলন। আম্মুর ডাকে তরমুজ খেতে গিয়ে কামড় বসানোর সাথে সাথেই বুঝে ফেলেছো, কেন এর নাম ওয়াটারমেলন। প্রতি কামড় তরমুজে পানি আছে ৯২ ভাগ। আর চিনি ৬ ভাগ। কিন্তু প্রায় পুরোটা পানি হলেও তরমুজ কিন্তু স্বাস্থ্যের জন্য দারুণ উপকারী।
এই গরমে শরীরের পানির চাহিদা মেটাতে এই পানি খুব দরকার। তরমুজ আবার ভিটামিন-সি এরও ভালো উৎস। এতে আরও আছে বেটা ক্যারোটিন ও লাইকোপিন। এখানে আরেকটা তথ্য জেনে রাখো। এই লাইকোপিন তরমুজ লাল হবার পেছনে দায়ী। সামান্য দায়ী বেটা ক্যারোটিনও।
তুমি হয়ত তরমুজ খেয়ে খোলসটা ফেলে দাও ময়লার ঝুড়িতে। কিন্তু আসলে খোলসটাও কিন্তু ভালো খাবার। হ্যাঁ, অত স্বাদ পাবে না খেতে। কিন্তু শুধু স্বাদের জন্য তো আমরা খাবার খাই না। চীনের মানুষেরা তরমুজের খোসা সবজি হিসেবে রান্না করে। শুধু তাই না। তারা এই খোসা খায় ভাজি করেও।
এমনকি আচারও বানাতে কসুর করে না। চীনেই কিন্তু পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি তরমুজ উৎপন্ন হয়। কে জানে ‘তৈরি’ও হতে পারে হয়ত! ওরাতো নকল ডিম, চাল সবকিছু বানাতে ওস্তাদ! তবে জাপানে গেলে তুমি প্রথম দেখায় তরমুজ চিনতেই পারবে না। কিউবের মতো চেহারা। গোল নয়।
এর কারণ হলো রাখার সুবিধা। বুঝতেই পারছো, গোল গোল তরমুজ রাখতে যে পরিমাণ জায়গা লাগবে কিউবের মতো তরমুজ রাখতে জায়গা লাগবে তার চেয়ে অনেক কম। ব্যতিক্রম কিছু দেখে চোখও তো কিছুটা আনন্দ পাবে।
চিত্র-২ : জাপানি তরমুজ
নিশ্চয়ই মনে প্রশ্ন জাগছে এই কাজ তারা কীভাবে করে। একটা ফলের স্বাভাবিক আকৃতি বদলে দেওয়া কি চাট্টিখানি কথা। শুনে আসলে চাট্টিখানি মনে না হলেও এটা আসলে চাট্টিখানির চেয়েও সোজা। আমি নিজেও প্রথমে ভেবেছিলাম, এটা বুঝি তারা করেছে তরমুজের জিন (ডিএনএ দিয়ে তৈরি) বদলে দিয়ে।
কিন্তু আসলে না। এটা করার জন্য তারা কিউব আকৃতির বক্স বানিয়ে নিয়েছে। ফল বের হওয়া মাত্রই একে বন্দী করা হয় বাক্সে। এক সময় পাওয়া যায় এক বাকশো তরমজু। বক্সটিকে খুলে আস্ত তরমুজ এবার বের করে নিলেই হলো।
চিত্র-৩ : কিউব আকৃতিত তরমুজ বানানোর রহস্য
তরমুজের আরেক বিখ্যাত অংশ এর বিচি। এই বিচি নিয়ে অনেক মজার কাণ্ডও করে মানুষ। এই যেমন ধরোবিচি নিক্ষেপ প্রতিযোগিতা। কে কত দূরে মুখ থেকে ছুঁড়ে মারতে পারে। জাপানে এই প্রতিযোগিতা খুবই জনপ্রিয়। তবে এই কাজে যিনি সেরা, তিনি জাপানের কেউ নন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ। জেসন শ্যানট।
শুনলে চমকে যাবে তিনি মুখ থেকে কত দূরে তরমুজের বিচি ছুঁড়ে ফেলেছেন । ৭৮ ফুট ৬ ইঞ্চি। এই অসামান্য কাজ তিনি করেন ১৯৯৫ সালে। তো, পাল্লা দিতে চাও নাকি শ্যানট সাহেবের সাথে? দিতে পারো। তবে পড়াশোনায়ও জাপানি আর অ্যামেরিকানদের সাথে পাল্লা দিতে ভুলো না যেন!
চিত্র-৪: পানিযুক্ত ফলের তুলনামূলক চিত্র
মে-জুন ২০১৯। বর্ষ ৫। সংখ্যা ১
No Comment