।ইমরান হোসাইন।
ভুল করার মাধ্যমে মানুষ অনেক সময় শিক্ষা গ্রহণ করে। ভুল হওয়ার মাধ্যমে নতুন তথ্যও কিছু ক্ষেত্রে জানা যায়। যেমন : আমরা থমাস আলভা এডিসনের কথা জানি। তিনি কিসের জনক তোমরা নিশ্চয়ই জানো?
তিনি অনেক কিছুরই জনক। তার মাধ্যে একটি হচ্ছে বৈদ্যুতিক বালব। কিন্তু তিনি রাতারাতিই এটি তৈরি করতে পারেননি। বাল্বের ফিলামেন্ট তৈরির সময় হাজারবার ব্যর্থ হন। কিন্তু তার ভাষায় এটি ব্যর্থতা নয়, বরং হাজারটি শিক্ষা।
কিন্তু তাই বলে একটি ভুল থেকেই যে বড় কোনো আবিষ্কার হয়ে যায়– যা আমাদের জন্য অনেক কল্যাণকর, এমন কোনো কিছু কি কখনো ভেবে দেখেছো তোমরা ? আজ এমনই একটি মজার ঘটনা বলব যেখানে ভুল থেকেই আবিষ্কৃত হয়েছে দারুণ কিছু।
পেনেসিলিন। চিকিৎসা বিজ্ঞানে একটি অসামান্য আবিষ্কার। পৃথিবীতে আবিষ্কৃত প্রথম অ্যন্টিবায়োটিক এটি– যা ব্যাকটেরিয়া ঘটিত বিভিন্ন রোগের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে। কিন্তু এই ওষুধটির আবিষ্কার হয়েছে একটি ভুল করা থেকে কিংবা ভুল হওয়া থেকে।
১৯২১ সালের কথা। ইংল্যান্ডের সেন্ট মেরিজ মেডিকেল স্কুলের ল্যাবরেটরিতে কাজ করছিলেন এক বিজ্ঞানী। তোমরা নিশ্চয়ই জানো সেই বিজ্ঞানীটির নাম। তার নাম হচ্ছে অ্যালেকজান্ডার ফ্লেমিং। জীবাণু কালচার নিয়ে তিনি তার পরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ তীব্র একটি হাঁচি এলো।
চিত্র-১
ফ্লেমিং নিজেকে সামলাতে না পেরে জীবাণু কালচার সেট সরানোর আগেই, সেটটির মধ্যে কিছু সর্দি পড়ে যায়। তিনি ভাবলেন পুরো জিনিসটি নষ্ট হয়ে গেছে। তাই ভেবে তিনি সেটটি সরিয়ে অন্য আরো একটি সেট নিয়ে কাজ শুরু করেন।
পরদিন ল্যাবরেটরিতে ঢুকে তিনি বিস্মিত হয়ে যান। তিনি যখন গতদিনের সেটটি পরিষ্কার করতে যাবেন, তখন লক্ষ করলেন গতদিনের জীবাণু আর নেই। তিনি দেহ থেকে বের হওয়া এই প্রতিষধকটির নাম দিলে লাইসোজাইম। ঘটনাটি এখানেই শেষ নয়।
অনেকদিন পর ১৯২৮ সালে ফ্লেমিং স্টেফাইলোক্কাস ব্যাকটেরিয়া নিয়ে কাজ করছিলেন লন্ডনের এক ল্যাবরেটরিতে। ল্যাবে কাজ করার কিছুদিন পর তিনি কয়েকদিনের জন্য স্কটল্যান্ডে বেড়াতে যান। যাওয়ার সময়ে তিনি ব্যাকটেরিয়া একটি কাচের পাত্রে রেখে যান এবং একটি ভুল করেন।
ভুলটি ছিল জানালা খুলে রাখা– যা চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাসে সবচেয়ে বিস্ময়কর জিনিসটি আবিষ্কার করে। দু সপ্তাহ ছুটি কাটিয়ে ল্যাবরেটরিতে ফিরে তিনি আবিষ্কার করেন– কোন ফাকে ঝড়ো বাতাসের দমকে খোলা জানালা দিয়ে ল্যাবরেটরির বাগান থেকে কিছু ঘাস পাতা উড়ে এসে জীবাণু ভর্তি প্লেটের ওপর পড়েছে।
তিনি প্লেটের জীবাণুর কালচারের মধ্যে স্পষ্ট পরিবর্তন দেখলেন। ফ্লেমিং বুঝলেন এই আগাছাগুলোর উপর একপ্রকার ছত্রাক জন্ম নিয়েছে। সেই ছত্রাক গুলো বেছে বেছে জীবাণুর ওপর আলাদাভাবে দিতেই জীবাণুগুলো ধ্বংস হয়ে গেল। তিনি বুঝতে পারলেন, তার গবেষণা অবশেষে সফল হয়েছে।
চিত্র- ২ : পেনিসিলিন বানাতে ব্যবহৃত ছত্রাকের নমুনা। অস্ট্রেলিয়ার মিউজিয়াম অব অ্যাপ্লাইড আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সে সংরক্ষিত।
ছত্রাকগুলোর বৈজ্ঞানিক নাম ছিল পেনিসিলিয়াম নোটেটাম (Penicillium notatum), তাই তিনি এর নাম দিলেন পেনিসিলিন। মজার ব্যাপার হলো, ১৯৫৪ সালে পেনিসিলিন আবিষ্কার এবং মানবকল্যাণে এর ব্যবহার ও অবদানের জন্য অ্যালেকজান্ডার ফ্লেমিং নোবেল পুরষ্কারে ভূষিত হন।
তখন পুরষ্কার পেয়ে তিনি বলেন, এ পুরষ্কারটি আমার নয় বরং মহান ঈশ্বরের পাওয়া উচিত। কারণ, তিনি আকস্মিকভাবে এটি ঘটিয়েছেন।
মে-জুন ২০১৯। বর্ষ ৫। সংখ্যা ১
No Comment