স্মার্টফোন, কম্পিউটার এবং অন্যান্য ডিজিটাল ডিভাইসে ব্যবহৃত ডিসপ্লেগুলি আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। এই ডিভাইসগুলোর স্ক্রিন থেকে নির্গত আলো আমাদের চোখের উপর কীভাবে প্রভাব ফেলে? এই প্রভাব কমানোর জন্য কী কী প্রযুক্তিগত সমাধান বর্তমানে বিদ্যমান বা ভবিষ্যতে কী কী নতুন ধারণা আসতে পারে?
চমৎকার প্রশ্ন! স্ক্রিনের আলো চোখে কেমন প্রভাব ফেলে—আর সেই প্রভাব কমাতে কী কী টেকনিক্যাল সমাধান আছে/আসছে—দুটোই সংক্ষেপে বলছি।
স্ক্রিনের আলো চোখে কীভাবে প্রভাব ফেলে
ব্লু-লাইট (≈415–455 nm) ও সার্কাডিয়ান প্রভাব
রাতে অতিরিক্ত নীল আলো মেলাটোনিন কমিয়ে ঘুমের ছন্দ নষ্ট করতে পারে। দীর্ঘমেয়াদে রেটিনার ক্ষতি নিয়ে বিতর্ক আছে, তবে রাত্রিকালীন উজ্জ্বল নীল স্পেকট্রাম এড়ানো নিরাপদ পন্থা।
ফ্লিকার/ঝিলিমিলি (PWM ডিমিং, FRC/টেম্পোরাল ডিথারিং)
অনেক OLED/LCD কম ব্রাইটনেসে PWM দিয়ে ডিম করে, কম ফ্রিকোয়েন্সি হলে চোখে চাপ, মাথাব্যথা বা ক্লান্তি বাড়তে পারে। 1000 Hz-এর নিচে সংবেদনশীলদের সমস্যা বেশি হয়। 6-বিট+FRC প্যানেলে রঙ বানাতে ক্ষুদ্র ফ্লিকারও থাকতে পারে।
গ্লেয়ার/রিফ্লেকশন ও কনট্রাস্ট
চকচকে স্ক্রিনে প্রতিফলন কনট্রাস্ট কমায়—চোখকে বেশি পরিশ্রম করতে হয়।
ড্রাই-আই (আলো নয়, অভ্যাসজনিত)
স্ক্রিনে তাকিয়ে থাকলে পলক পড়া ৫০% পর্যন্ত কমে—শুষ্কতা, জ্বালা, ঝাপসা লাগে। এটা আলোর স্পেকট্রাম নয়, ব্যবহারভঙ্গি-সম্পর্কিত।
নিকটদৃষ্টি/মাইোপিয়া
মূলত “দীর্ঘক্ষণ নিকট কাজ” ও কম আউটডোর-লাইট এক্সপোজার জড়িত; স্ক্রিনের আলো নিজে সরাসরি কারণ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত নয়।
আজকের টেকনিক্যাল সমাধানগুলো
Night Shift/Blue-light filter/Reading mode
ডিসপ্লের করেলেটেড কালার টেম্পারেচার (CCT) রাতের বেলা 2700–3000 K-এ নামিয়ে নিন; নীল পিক কমে চোখ ও ঘুম—দুটোর জন্যই ভালো।
True Tone/Adaptive white point/Auto-brightness
পরিবেশের আলো অনুযায়ী হোয়াইট-পয়েন্ট ও উজ্জ্বলতা বদলে চোখের চাপ কমায়।
DC Dimming / High-freq PWM
PWM হলে 1–2 kHz বা তার বেশি ফ্রিকোয়েন্সি ভালো; না হলে সরাসরি-কারেন্ট (DC) ডিমিং-সমর্থিত মডেল নিন।
Flicker-free সার্টিফিকেশন
“Flicker-Free”, “Low Blue Light (Hardware)” বা IEC 62471-এর RG0/মুক্ত বিপদ লেবেলযুক্ত মনিটর নজরে রাখুন।
Anti-glare কোটিং/ম্যাট স্ক্রিন
রিফ্লেকশন ও স্পেকুলার গ্লেয়ার কমে।
হাই রিফ্রেশ-রেট (120–240 Hz)
স্ক্রলিং স্মুথ হয়; মোশন-ব্লার ও লেটেন্সি-জনিত অস্বস্তি কমতে পারে।
ফন্ট-রেন্ডারিং ও হাই DPI
উচ্চ রেজোলিউশন/ভাল সাবপিক্সেল লেআউট (RGB স্ট্রাইপ) টেক্সট পড়া সহজ করে।
Ambient-aware ডার্ক/লাইট থিম
অন্ধকার ঘরে ডার্ক-থিম, উজ্জ্বল ঘরে লাইট-থিম কনট্রাস্ট অপ্টিমাইজ করে।
ই-ইঙ্ক/রিফ্লেক্টিভ ডিসপ্লে (পড়ার জন্য)
ব্যাকলাইট নেই—দীর্ঘপাঠে আরামদায়ক (স্ট্যাটিক কন্টেন্টে সেরা)।
কোন ডিসপ্লে-টাইপে কী খেয়াল রাখবেন
OLED: গাঢ় থিমে কম আলো, কনট্রাস্ট দারুণ; তবে কম ব্রাইটনেসে PWM সাধারণ—ফ্রিকোয়েন্সি চেক করুন।
LCD (IPS/VA): সাধারণত PWM-বিহীন বা উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সি; অ্যান্টি-গ্লেয়ার ভ্যারিয়েন্ট সহজলভ্য।
Mini-LED/QD-LCD: লোকাল ডিমিং ও ন্যারো-ব্যান্ড ফসফর/কোয়ান্টাম-ডট—উজ্জ্বলতা-রঙ ভাল, ঠিকভাবে টিউন করলে নীল-পিক নিয়ন্ত্রণযোগ্য।
ব্যবহারভিত্তিক দ্রুত সেট-আপ (প্র্যাক্টিক্যাল)
রাত ৯টার পর: Warm mode (≈2700–3000 K) + Auto-brightness অন।
লম্বা লেখা/কোডিং: ম্যাট স্ক্রিন, 120 Hz+, ফন্ট সাইজ বড়, হাই-কনট্রাস্ট।
কম ব্রাইটনেসে ঝিলিমিলি লাগে? DC dimming বা হাই-PWM ডিভাইস নিন; “Flicker-Free” খুঁজুন।
দূরত্ব 40–75 cm, স্ক্রিনের টপ চোখের সমতলে বা সামান্য নিচে।
20-20-20 রুল + ঘনঘন পলক (blink) রিমাইন্ডার।